সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
গেরিলা যোদ্ধা ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম পূর্ণমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের ৭৩ তম জন্মদিন আজ । তিনি ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া গাজী। মায়ের নাম শামসুনেচ্ছা বেগম। তার বাড়ি রূপগঞ্জে। তিনি পড়াশুনা শুরু করেছেন পুরান ঢাকার বিদ্যাপিঠে। মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। পরে ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন।
ছাত্র থাকা কালীন সময়ে গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নিবার্চন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এর সব ঘটনায় জীবনবাজী রেখে লড়াই করেছেন তিনি।
ছাত্র অবস্থায় গোলাম দস্তগীর গাজী বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তিনি ২ নং সেক্টরের অধীনে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছে। তিনি ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। রাজধানী ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করতে কয়েকটি সফল অপারেশনে অংশ নেন তিনি। তার মধ্যে একটি অপারেশন ছিল ১৯৭১ এর ১৯ জুলাই। সেদিন গোলাম দস্তগীর গাজী ছিলেন এই অপারেশনের সম্মুখ ভাগে। তিনি সফল হয়েছিলেন।
৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা ত্রিমোহনীত আক্রমন করলে গোলাম দস্তগীর গাজী গুলি চালাতে চালাতে সামনে এগিয়ে যান। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। সেদিনের আক্রমনে ১২/১৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১৩ই ডিসেম্বর গোলাম দস্তগীর গাজীসহ মুক্তিযোদ্ধারা রূপগঞ্জকে শত্রু মুক্ত করে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য (২০২০) মনোনীত হয়েছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে থাকলেও গোলাম দস্তগীর গাজী নিজ বুদ্ধিমত্তা, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি ও কর্মদক্ষতা কাজে লাগান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে।
১৯৭৪ সালে দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও দেশের শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্লাস্টিক ও রাবারজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা করলে গোলাম দস্তগীর গাজী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কাকরাইল, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, মৌচাক, ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকা থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন।
তিনি এফবিসিসিআইয়ের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রীড়া অঙ্গনে গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি বিসিবির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মানবসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য গোলাম দস্তগীর গত বছর মাদার তেরেসা পুরস্কার পেয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবনের বহু চড়াই-উৎরাই পার করা গোলাম দস্তগীর গাজী ৯০-এর দশক থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকাবাসীর জন্য কাজ করতে শুরু করেন। আওয়ামীলীগের আন্দোলন সংগ্রামে গোলাম দস্তগীর গাজীর অবদান ভুলবার নয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতের দু:শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী গুলি খেয়েছেন। তিনি আন্দোলন করে গোটা নারায়ণগঞ্জ কে কাপিয়ে তুলেছেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাবন্দী শেখ হাসিনাকে মুক্তির মহানায়ক ছিলেন। তিনি নেত্রীর জন্য জেল খেটেছেন। ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের সরকার গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছিলো শেখ হাসিনার নামে মিথ্যা দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে । সে দিন গোলাম দস্তগীর গাজী সেনাবাহিনীকে বলেছিলো আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমি যুদ্ধ করেছি আমাকে মেরে ফেলুন তবু আমি শেখ হাসিনার নামে মামলা দিতে পারব না।
তখন সেনাবাহিনী অমানবিক নির্যাতন করেছিলো গোলাম দস্তগীর গাজী কে ।২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান কে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সবাইকে অবাক করে দেন।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৪ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মধ্যে রূপগঞ্জে গোলাম দস্তগীর গাজী জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচিত হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী ১ লাখের অধিক ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।
গোলাম দস্তগীর গাজীর পদচারণায় বদলে গেছে রূপগঞ্জের উন্নয়ন চিত্র। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে রূপগঞ্জের উন্নয়নের জন্য যতগুলো প্রকল্প দিয়েছে তা সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী । তার নামে নেই কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান কে ২ লাখের অধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে টানা তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারী স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর নারায়ণগঞ্জে থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মন্ত্রী হন তিনি। তিনি দায়িত্ব পান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের । তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান। বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি, দৈনিক সারাবাংলার মালিক তিনি। তিনি ৮ বছর যাবত বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতা। তার দুই ছেলে । বড় ছেলে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক । অপর ছেলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক। গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী হাছিনা গাজী তারাব পৌর সভার মেয়র। জন্মদিনে মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তার শুভাকাঙ্খীরা। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।