আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোটের পর দেখা নেই

স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের নির্বাচনি এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়ে বদলে গেলেও দিনে দিনে ভঙ্গুর হচ্ছে ফতুল্লা। তা নিয়ে ফতুল্লাবাসীর মাঝে আক্ষেপ-অভিযোগের শেষ নেই। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে রেহায় মিলছে না ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের। গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকার অভ্যন্তরীন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। বিশেষ করে, লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এবং ফতুল্লার ক্যালিক্স স্কুল সড়ক তলিয়ে আছে পানির নিচে। দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি আজও লাঘোব না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের কাঠগড়ায় এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ করে, সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে ভুক্তভোগীদের মাঝে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের উন্নয়নে কর্তৃত্ব নেই শামীম ওসমানের। কেননা, সিটি এলাকা হওয়ায় সেখানে উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন মেয়র আইভী। শামীম ওসমানের কার্য পরিধি কেবল ফতুল্লা থানা এলাকায়। এর মধ্যে ফতুল্লা, কুতুবপুর, এনায়েতনগর, বক্তাবলী ও কাশিপুর সহ পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে ফতুল্লায়। এই পাঁচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা শামীম ওসমানের আজ্ঞাবহ। তারা এতোটাই জ্বি হুজুর করে চেয়ার টিকিয়েছেন যে, কেউই এলাকার উন্নয়ন ও প্রয়োজনের বিষয়ে জোড়ালো দাবি উপস্থাপন করতে পারেন না এমপির কাছে। উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে পরার এটাও অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করছেন ফতুল্লাবাসী।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না শামীম ওসমানের। কেবল ফতুল্লার উন্নয়ন নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় তাকে। তবে পরিধি ছোট হলেও দীর্ঘ দিনেও তা সাজিয়ে তুলতে পারেনি প্রভাবশালী এই এমপি। উন্নয়ন কাজ হলেও পরিকল্পিত না হওয়ায় এর সুফল পায়না ফতুল্লার বাসিন্দারা।
এদিকে, বছর ঘুরে আবারও বর্ষা মৌসুমের হাতছানি দেখা দিয়েছে। রাস্তা ঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিকল্পিত ভাবে তৈরী না করায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এসব এলাকার মানুষের কপালে। জলাবদ্ধতা ওই অঞ্চলের পুরনো সমস্যা। বর্ষা মৌসুম এলেই ডুবে যায় শামীম ওসমানের নির্বাচনী এই অঞ্চলটি। ভয়াবহ এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে ফতুল্লা ও কুতুবপুরের মানুষ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও করেছিল। লালপুরের মানুষ চাপা কান্না কেঁদেছে বছরের পর বছর। বরাবরের মত গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও শামীম ওসমান তার নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জলাবদ্ধতা মুক্ত করণে তিনি কাজ করবেন। গত বর্ষায় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে লালপুরের পানিতেও নেমেছিলেন। তবে কোনো কিছুতেই যেন কাজের কাজ হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এসব এলাকায় এখনো যাননি শামীম ওসমান। কথা রাখেননি তিনি। এরই মাঝে বর্ষা মৌসুম আসন্ন। এবারও জলাবদ্ধতার দুঃসহ ভোগান্তিতে উপনীত হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ দেখছেন না নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
সবমিলিয়ে এক অভিশপ্ত এলাকায় রূপ নিয়েছে লালপুর পৌষারপুকুর পাড় ও আশপাশের এলাকাটি। গত বছর ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি সাংসদ শামীম ওসমান নিজেই লালপুরকে অভিশপ্ত বলে মন্তব্য করেন। তবে, শামীম ওসমানের ওই মন্তব্যের পর স্থানীয়দের মাঝে নানামুখি আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, কার কারণে অভিশপ্ত হলো লালপুর? কিংবা বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকলেও এযাবৎ কেনো স্থায়ী সমাধানে এগিয়ে আসেনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি? কিংবা এগিয়ে এলেও কেন হচ্ছে না সমস্যার সমাধান? ধীরে ধীরে অভিশপ্ত হয়ে উঠা ফতুল্লাবাসি যেই দুঃসহ ভোগান্তি পোহায়, এর দ্বায় নেবে কে? এমন সব প্রশ্ন স্থানীয়দের মাঝে ঘুরপাক খেলেও সমস্যা সমাধানে এখন আর তোড়জোড় নেই শামীম ওসমানের।
যদিও বছর দুয়েক আগে জলাবদ্ধতার মাঝে শামীম ওসমান হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং এও বলেছিলেন যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনে তিনি পানিতে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এরপর এলজিইডির ১৫০ কোটি টাকার একটি বরাদ্ধের কথা বলে ফতুল্লাবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। তবে দুবছর পরও সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
তথ্য বলছে, ১৯৯৬ সালে এক দফা ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৩ সাল থেকে অদ্যবধি এই অঞ্চলের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামীম ওসমান। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে ডিএনডির মেগা প্রকল্প পাশ হয়। শামীম ওসমান নিজেই বলে থাকেন তিনি দৌড় ঝাপ করে এই প্রকল্প আনার ক্ষেত্রে ভুমিকা রেখেছেন। কিন্তু ফতুল্লার লালপুর ও আশপাশের বাসিন্দারা এতোটাই হতভাগা যে, ডিএনডি অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ডিএনডি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত হয়নি তারা। স্থানীয়দের প্রশ্ন- কোন কারণে লালপুর এলাকাটি ডিএনডি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত হলো না? আর সাংসদ শামীম ওসমান ডিএনডি প্রকল্প নিয়ে বাহবা কুড়ালেও লালপুর, ইসদাইর ও গাবতলী এলাকাটি তিন বছরেও কেন ডিএনডি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত করতে পারলেন না? বর্ষা এলে এমন আক্ষেপ আর হতাশা নিয়েই ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করতে হয় ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের।