আজ সোমবার, ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোট ত্যাগে বিএনপির যৌথসভা

স্টাফ রিপোর্টার :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। সাধারণ মানুষকে ভোট বিমুখ করতে তৎপর রয়েছে দলটির নেতৃবৃন্দ। এরই মাঝে গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জে এসেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না জানিয়ে সাধারণ মানুষকেও ভোট কেন্দ্রে না যেতে উদ্বুদ্ধ করণ নিয়ে আলোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
গতকাল বিকেল ৪টায় হিরাঝিল এলাকায় নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপি এবং অংগ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন।
এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পরিস্কার নির্দেশনা; বিএনপির কোনো নেতাকর্মী নির্বাচনী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হলে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা। এছাড়াও ভোটারদের নিরুৎসাহিত করণে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
প্রবীন নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতীয়মান হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের নিরুৎসাহিত করণে বিএনপির হাইকমান্ড কতটা তৎপর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মামলা ও গ্রেফতার অভিযানের মধ্যদিয়েও বিএনপি এবং সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করণে সফল হয়েছেন বলে দাবি করে থাকে বিএনপি। উপজেলা নির্বাচনেও ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি পর্যাপ্ত না হলে সাধারণ ভোটাররা যে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছে- তেমন ম্যাসেজ দিতে চায় বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। তবে এবারের উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকবিহীন হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র বিমুখ করাটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য। এই চ্যালেঞ্জে সফল হতেই তৎপর হয়ে উঠেছেন দলটির নেতৃবৃন্দ।
যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এবার সাধারণ মানুষের মাঝে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। তবে এই কর্মসূচিও অচিরেই শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, হাই কমান্ডের বরাত দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপির কোনো নেতা কিংবা কর্মীর সম্পৃক্ততা পেলে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা।
গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির সাথে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধিনে বিএনপি সকল নির্বাচন বর্জন করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর ফল আমরা দেখেছি। ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটার শূন্য অবস্থায় ছিলো। এবারের উপজেলা নির্বাচনও আমরা বর্জন করেছি। তার বিএনপি থেকে কেউ প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, কারও বিষয়ে যদি নির্বাচনী কোনো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়েও তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররাও যেন এই এক তরফা নির্বাচন বর্জন করে, সেই লক্ষ্যে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করণ কার্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।’
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জে এসে জেলা ও মহানগর বিএনপির সাথে যৌথ সভা করেছে। যেহেতু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে, সেহেতু বিএনপি থেকে কোনো নেতকর্মী প্রার্থী হয়েছে কিনা- তা জানতে চেয়েছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কেউ প্রার্থী হয়নি। মুকুলকে তো বহু আগেই দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সে বিএনপির প্রার্থী নয়।’
সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, এই নির্বাচন বর্জনের পক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে যেন সচেতনতা তৈরীতে আমরা কাজ করি। লিফলেট বিতরণসহ শান্তিপূর্ন কর্মসূচি পালন করবো আমরা। পাশাপাশি বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যদি কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয় বা নির্বাচনী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’