সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মেতে উঠছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন । নির্বাচনের পর দল পুনরায় ক্ষমতায় আসায় বেশ ফুর্তিতেই কাটছিল ক্ষমতাসীন দল নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। কিন্তু মাঝপথে এসে যেন ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মত্ত হয়ে যায় দলটি। যার রেশ বছরের মাঝামাঝিতেই গড়ায়। অন্যদিকে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে জোট সহ বিএনপির ৫টি আসনে ভরাডুবির পর আবারও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। যার কারনে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা চলছে বলে অভিমত জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ নির্বাচন সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চলতি বছরের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত বেশ আনন্দ ফূর্তিতেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দিন যাপন করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই নিজের পদ-পদবী নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহন না করলেও নিজের আখের ঘুছিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এবার বাজপাখির নজর পড়েছে সেই সকল নেতাকর্মীদের দিকে। যারা দলের পদ নিয়ে নিজের আখের ঘুছাতেই ব্যস্ত। যার করনে কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে বলে সূত্রে জানা যায়।
তৃনমূল অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সারাদেশে উন্নয়ন ঘটে। জনগণ ও এলাকার উন্নয়ণের স্বার্থেই যেখানে নেতাকর্মীদের কর্মকান্ড উলেখিত হবার কথা, সেখানে নিজেরাই নিজেদের কার্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোন অনুষ্ঠানে সভাপতি আসলে সাধারণ সম্পাদক আসে না। দুজন আসলেও অনেক পদদারি নেতাদের উপস্থিত চোখেই পরে না। তারা শুধু রয়েছে নিজের পদ বিক্রি করে স্বার্থ হাসিলের জন্য। আর এই কারনেই কেন্দ্র দলকে পুনরায় গঠিত করার জন্য একটি আবাস দিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে ত্যাগীদের মূল্যায়ণ করবে কেন্দ্র।
অপরদিকে, নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি পর্দশন করতে এবং সংগঠন গোছাতে বিএনপির মূল দল সহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি করা হচ্ছে। এতেকরে নিজেরে অবস্থান অনেকটাই শক্ত ভাবে গড়তে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজণৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মূল দলের পূর্নাঙ্গ কমিটি, যুবদল, জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ কমিটি সহ ডক্টরস এস্যোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), জেলা মৎসজীবী দলের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংগঠনেরও নতুন কমিটি করা হবে বলে সূত্রে জানা যায়।
সংগঠনের নেতারা বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা মোকাবেলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে বাস্তবতার নিরিখেই পথ চলতে চান নীতিনির্ধারকেরা।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, এ বছরের ২৭ মার্চ বুধবার জেলা বিএনপির ২০১ সদস্য পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্র। মহানগর বিএনপির ২০১ সদস্য পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্র। অন্যদিকে গত বছর ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা ছাত্রদলের ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও মহানগর ছাত্রদলের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে গত ৭ জুন নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়। ৫ সদস্য বিশিষ্ট। গত ১১মে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম এবং সদস্য সচিব হয়েছেন ডা. শফিউল আলম ফেরদৌস। এবং গত ১৪ নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী দলের ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে কমিটি ভাঙ্গার পথে, অন্যদিকে বিএনপির সংগঠনকে সু-সংগঠিত করতে কমিটি গড়া হচ্ছে। যেটাকে নারায়ণগঞ্জে ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।