আজ শুক্রবার, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে ঐতিহ্যের বেলের থলা

বেলের থলা

বেলের থলা
গাজী মোবারক, সোনারগাঁ প্রতিনিধি: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘেষেই সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নের গোহাট্টা গ্রাম। একেঁবেকে চলা মাটির সরু রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে ক্ষনিকের জন্য হলেও দৃষ্টি কেড়ে নেয় রাস্তায় দু’পাশে জমাট করা সবুজ রংয়ের বেল। পাশেই বড় বড় মাটির হাড়ির আদলে তৈরি অসংখ্য গর্ত। কাছে যেতেই কথা হয় বেলের বেপারী ফয়জুল মিয়ার সাথে। বেল পাঁকানোর জন্য গর্ত বা থলা তৈরি করা হয় । তিনি জানান, প্রতি বছর খুলনা, বান্দরবান, গাজী পুর থেকে কাঁচা বেল এনে প্রাকৃতিক উপায়ে পাঁকিয়ে বিক্রি করা তাদের চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা। জানান, সোনারগাঁয়ের মসলিনের বিখ্যাত কারিগররা কোষ্ট-কাঠিন্য থেকে রেহাই পেতে তাদের পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে বেল কিনে খেত। দূর দূরান্ত থেকে বানিজ্যে এসে মহাজনরা নানা দেশ-বিদেশে নিয়ে যেত। সোনারগাঁও ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন মাঠেও বেলের থলা দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে মন্দার কারনে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। গোহাট্টা গ্রামের ফয়জুল মিয়ার বাবা, ইউনুস আলী, দাদা জালাল বেপারী ও দাদার বাবা ফয়জুদ্দিন প্রধান বেল পাঁকানো ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।
বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেলের খাদ্যগুন জানলেও অনেকেই জানেনা বেল কিভাবে পাকানো হয়। বেপারীরা জানান, প্রথমে বেল বাছাই করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আশুলী বেল পাঁকতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন আর লালী বেল পাঁকতে সময় লাগে ৬-৮ দিন। পুরো কাঁচা বেলকে বলা হয় আশুলী আর কাঁচাপাঁকা বেলকে বলা হয় লালী বেল। গর্তপ্রতি খরচ হয় ৫-১৫ শত টাকা। জানা যায়, খুলনা, বান্দারবনে প্রতিটি বেলের ক্রয়মূল্য ৩-৬ টাকা হলেও গাড়ি ভাড়া ও পাকানোসহ খরচ হয়ে ২০-২৫ টাকা। প্রতিটি বেল পাইকারী বিক্রি করেন ৩০-৩৫ টাকায়। তবে গাজীপুরের প্রতিটি বারি-১ বেল কিনতে হয় ১৫০-৪০০ টাকায়। পাঁকানো পর্যন্ত খরচ ৩০০-৬০০ টাকা। প্রতিটি বেল বিক্রি করে ৪০০-১০০০ টাকা।
বেল পাকানো কারিগর সোহেল মিয়া, রাসেল মিয়া, আঃ রহিম ও সোহম জানান জন্মসুত্রে পিতার হাত ধরেই এ ব্যবসায় আসা। তাদের সকলের বয়স ৩০-৪০ এর মধ্যে। জানান, কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত তারা বেল পাকাঁনোর জন্য গর্ত তৈরি করেন। গর্তের মুখটি থাকে দেড় ফুট।একজন মানুষের নাক পর্যন্ত গভীর এবং দুই হাত দুইদিকে ছড়িয়ে দিলে যতটুকু হয় ততটুকু পাশ। গর্তের নিচে খেড় ( ধান গাছের খড় ) দিয়ে বেল রাখা হয়। পরে গর্তের মুখে ৬/৮ কেজি ওজনের মাটির হাড়িতে কাঠেরগুড়ি ও ধানের তুষ রেখে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ১৬/১৮ দিন অন্তরে তুষের আগুন জ্বলে রইয়া রইয়া। সকাল বিকাল একই ছাঁচে আগুন জ্বালতে হয়। একটি গর্তে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বেল পাকাঁনো যায়। শীতকালে বেল পাকঁতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন আর গরমকালে ৭-৯ দিন সময় লাগে।