এম.এ মোমেন
বাংলাদেশিরা শৌখিন। সুন্দরের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়। পছন্দও ভালো। আপ্যায়ন জানে। ইচ্ছা-অনইচ্ছায় শখের জিনিস কেনেন। সেকারণে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আমাদের পণ্য বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথাগুলো বলছিলেন বাণিজ্য মেলার তুর্কি প্যাভিলিয়নের অরজিনাল ইস্তাম্বুল স্টলের মালিক সিহান জামুর। তিনি তাঁর পিতা সিমাল জামুরকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় স্টল দিয়েছেন। আলোকসজ্জার উপকরণাদি ও কসমেটিকস তারা বিক্রি করেন। এখন পর্যন্ত মেলায় বিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট বলে জানান।
১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুইটি হল ছাড়াও এর সামনে পিছনে বসানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন। এবার মেলায় ৩৩১ টি স্টল বসেছে। এদের মধ্যে দেশি ৩১৪টি। বিদেশি ১৭টি। এসকল বিদেশি স্টলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বিদেশি স্টলগুলোতে তুলনামূলক ভাবে দর্শকদের ভিড় লেগেই থাকে। এসকল স্টলে অনেকেই নিজেকে জড়িয়ে ছবি তোলেন।
বিদেশি স্টলে পণ্যের মান ভালো। দৃষ্টিনন্দন। ব্যবহারে বিলাসী। দামে বেশি। তারপরও ক্রেতাদের কোন অভিযোগ নেই। সকলের যেন দৃষ্টি সেখানেই। মেলার তুরস্কের বাতিঘর সবার নজর কাড়ছে। তৈজসপত্র, গহণা, থালা-বাসন, আলোকসজ্জার ও ঘর সাজানোর উপকরণ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। একটি ল্যাম্প ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তুর্কির বাতিঘরে ৫শ’ টাকার নিচে কোন পণ্য নেই।
সিহান জামুর পিতা সিমাল জামুর ১৮ বছর ধরে বাণিজ্য মেলায় পণ্য নিয়ে আসেন। সিহান জামুর গত ৭বছর ধরে তাঁর পিতার সঙ্গে বাণিজ্য মেলায় আসেন। কেনাবেচা নিয়ে তাঁর বেশ অভিজ্ঞতা। ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমনে তিনি খুশি। মেলা ব্যবসা সফল হবে বলে তিনি মনে করছেন। তুর্কিস ল্যাম্প, কার্পেট, মেলামাইন, হ্যান্ডব্যাগ, জুয়েলারী, গ্লাস, প্লেট, পিলো ও সিরামিকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এখানে বিক্রি হচ্ছে।
তুরস্কের সুলতান হোমসের মালিক শাহ্ আলী তাজ ২০১০ সাল থেকে বাণিজ্য মেলায় পণ্য নিয়ে আসেন। মেলার আশপাশে আবাসিক সমস্যার কারণে তিনি উত্তরায় ফ্লাট বাসায় ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, মেলা এলাকায় আবাসিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এছাড়া অন্য কোন সমস্যা নেই। মেলার শেষের ১৫ দিনে কেনাবেচা ভালো হয়। এবারও তাই হবে। তবে আশার আলো দেখছেন শাহ্ আলী তাজ। সুলতান হোমসে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লক্ষ টাকার পণ্য রয়েছে। তবে হাতের তৈরি পণ্যের দাম একটু বেশি।
ঢাকার মালিবাগ থেকে মেলায় আসা গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার বলেন, নিজের ঘর ভিন্ন ভাবে সাজাতে চায় সবাই। সাজসজ্জার জন্য তুর্কির ল্যাম্পগুলো খুবই সুন্দর। এখানকার পণ্যের দাম বেশি হলেও ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই।
বিদেশি পণ্য জুতা, পোশাক, কসমেটিকস, হারবাল, শীতবস্ত্র, কার্পেট, শালসহ গৃহস্থালীর উপকরণের চাহিদা বেশি। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। বিদেশি কার্পেট ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কাশ্মিরী শাল ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি মনির হোসেন সোহাগ বলেন, মেলার আয়োজন ভালো। সমস্যা নেই। তবে ধুলাবালুতে পানি দিতে পারলে পরিবেশ সুন্দর হতো।
এবার ভারত, হংকং, তুরাক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেপালসহ ১০টি দেশ তাদের পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন মিলে ১৭টি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশি ও বিদেশিদের স্টলে সমান ভাবেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বিদেশিদের বিশেষভাবে মেলায় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে ক্রেতা দর্শনার্থীরাও বিদেশি পণ্য ক্রয়ে ঝুঁকছেন। তাতে বিদেশি স্টলের মালিকদের মধ্যে মেলায় অংগ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে। তারা লাভবানও হচ্ছেন।