স্টাফ রিপোর্টার :
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে সাদা পোশাকে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে এমনটা দাবি করা হয়েছে। তবে দিনেই জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্বে দেখা গেছে গিয়াস উদ্দিন।
গতকাল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে অনুষ্ঠিত নারায়ণগগঞ্জ জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যকালে গিয়াস উদ্দিন জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত গিয়াস উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা নিবাসে অভিযান চালায়।
গিয়াস উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী পল্টু কর্মকার দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ৪টি মাইক্রো বাসে করে সাদা পোশাকধারি বেশ কয়েকজন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়িতে হানা দেয়। বাড়ির সিসি ক্যামেরা খুলে নেয় এবং গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন মামলার ওয়ারেন্ট না থাকা সত্ত্বেও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে চলে যায়। শনিবার বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে ভীতি সঞ্চার করতে এমনটা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, রাতে বাড়িতে ডিবি পুলিশের অভিযান চালালেও দিনে বিএনপির কর্মসূচি পালনে মাঠেই ছিলেন গিয়াস উদ্দিন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
রাতে বাড়িতে চালানো ওই অভিযানের ঘটনাটি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। গতকালের অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগা থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, ‘আমাদের জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন ভাইয়ের বাসায় রাতের আধারে ডিবি পরিচয়ে হয়রানী করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, ‘কর্মসূচির আগের রাতে জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন সাহেবের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এতে অনেকেই মনে করেছিল যে, সেই অভিযানের ভীতির কারণে জেলা বিএনপির এই কর্মসূচি সফল হবে না। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের নেতা গিয়াস উদ্দিন ভাই সহ সকল নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় ভাবে অবস্থান নিয়েছে। আমরা দেখি যে, অন্যান্য সংগঠনগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করছে। সেখানে কোন বাধা নেই। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা চলছে। এতে বুঝা যায় যে, সম্পূর্ন ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এটা করানো হয়েছে। এগুলো শোভনীয় নয়।’
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেছেন, এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপি নেতাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে এখন পুলিশের উপর ভর করেছেন। খুটির জোরে আপনি হাটতে পারবেন না। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে পারেন না বলেই এই কর্মসূচি পণ্ড করার জন্য আগের রাতে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়িতে ডিবি পুলিশ পাঠিয়েছেন। চোখ রাঙিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু দেখেন আপনারা তা পেরেছেন কিনা? আমরা আজ মাঠেই আছি, কিন্তু আপনারা কেউ মাঠে নেই।’
এদিকে, জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে ঘিরে গতকাল ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এবং কর্মসূচিস্থলে সতর্ক অবস্থানে ছিলো পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ফতুল্লা থানা পুলিশকে যৌথ ভাবে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে রাতে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা জানান, আমাদের থানা পুলিশের কেউ অভিযানে যায়নি। হয়তো ডিবি পুলিশ অভিযান চালাতে পারে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এমপি শামীম ওসমান এবং বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে ঘিরে। ইতিমধ্যেই তারা বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। তার এই রাজনৈতিক লড়াইটা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে শামীম ওসমান এবং বিএনপির হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামেন গিয়াস উদ্দিন। এতে শামীম ওসমান বিপুল ভোটে পরাজিত হন। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও তাদের দু’জনকে ভোটের লড়াইয়ে দেখা যেতে পারে। এতেই তাদের ঘিরে নতুন উত্তাপ শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গণে।