এম.এ মোমেন
গত ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়। স্টল ও প্যাভিলিয়নে উপচে পড়া ভিড় জমে। শেষ মূহুর্তে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। এতদিন যাঁরা মেলা ঘুরে ফিরে দেখছেন এখন তারা যেন পণ্য ক্রয় করতেই মেলায় এসেছেন। সকলেই নিজ নিজ পছন্দের পণ্য ক্রয় করছেন। কেউ বাদ যাচ্ছে না। মূল্যছাড়ে পণ্য কেনায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সকাল থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। জুম্মার নামাজের পর মানুষ দল বেঁধে মেলায় প্রবেশ করে। বিকেল পাঁচটার দিকে মেলাপ্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা দর্শনার্থীরা সারিবদ্ধভাবে মেলায় প্রবেশ করছেন। এদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। বাণিজ্য মেলা শেষের দিকে হওয়ায় ক্রেতা দর্শনার্থীরা যেন মেলায় আসার প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলায় এতদিন কমদামি পণ্য বেশি বিক্রি হয়েছে। এখন ক্রেতারা বেশি দামি পণ্যও ক্রয় করছেন। মেলায় প্রসাধনী, ফার্নিচার, ক্রোকারিজ, গৃহস্থালি পণ্য দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। মেলার শিশু পার্কেও আরো বেশি ভিড়। রেস্টুরেন্ট সহ খাবারের দোকানে লাইনে দাড়িয়ে খাবার খেতে হচ্ছে। প্রসাধনী ও ইমিটেশনের গয়নার দোকানে তরুণী ও নারীদের আনাগোনা বেশি। এখানে কেনাবেচারও কমতি নেই।
মেলায় প্লাস্টিক সামগ্রী, কাপড়, গৃহস্থালি পণ্য, ইমিটেশনের গয়না, ক্রোকারিজ, কসমেটিক্স, সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, রুটি মেকার, ভেজিটেবল কাটার, প্রেশার কুকার, ননস্টিক ফ্রাইপ্যান, খাবার, পাট-চামড়া জাত পণ্য, মেলামাইন, খেলনা, সিরামিক, ইলেক্ট্রনিক্স, আসবাবপত্র ও আইসক্রিমের স্টলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
মেলায় আরএফএল স্টলের কিচেন ওয়্যার, কিচেন সেলফ, ফুড কন্টেইনারসহ প্লাস্টিকের ফার্ণিচার কিনছেন অনেকেই। মেলার শেষের দিকে এখন পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
মেলার প্যাভিলিয়নে মেঘনা গ্রুপ, বেঙ্গল, স্কয়ার, গাজী গ্রপের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। ফার্ণিচারের প্যাভিলিয়ন নাভানা ফার্ণিচার, হাতিল ফার্ণিচার, আখতার ফার্ণিচার, নাদিয়া ফার্ণিচার, হাতিম ফার্ণিচার, ব্রাদার্স ফার্ণিচারে আরো বেশি ভিড়। সকল স্টল ও প্যাভিলিয়নে বেচা কেনার ধুম পড়েছে। মূল্যছাড়, লোভনীয় ডিসকাউন্ট আর আকর্ষণীয় অফারে কেনাবেচার প্রতিযোগিতায় নামে ক্রেতা বিক্রেতারা। সবাই যেন পণ্য কিনতেই মেলায় এসেছেন। কিছু না কিছু পণ্য ক্রয় করে নাই এমন কোন পরিবার দেখা যায়নি।
শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে বাণিজ্য মেলা। স্টল ও প্যাভিলিয়নের দেশি ও বিদেশি পণ্য বিক্রিতে চলছে আকর্ষণীয় ছাড়, ডিসকাউন্ট ও লোভনীয় অফার। ভারতের জম্মু, কাশ্মীর, হিমাচল ও শ্রীনগরের তৈরি কার্পেটের প্যাভিলিয়নে নারীদের ভিড় লেগেই ছিলো।
শিক্ষা উপকরণের স্টল পাইলট জাপানের ইনচার্জ হায়াতুর রহমান বলেন, মূল্যছাড় ও ডিসকাউন্টে বিদেশি কলম ২৫ টাকা থেকে ২৬ হাজার ৫০০ টাকা, পেন্সিল ১০০ টাকা থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দিল্লী অ্যলুমিনিয়ামের বিক্রয় প্রতিনিধি আব্দুল জব্বার বলেন, গৃহস্থালি পণ্যেই বিক্রি হচ্ছে বেশি। স্টলে নারী ক্রেতাদের থাকে উপচে পড়া ভিড়। মূল্যছাড় পেয়ে এখন ক্রেতারা দেদারছে পণ্য ক্রয় করছে। পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
মেলার গোল্ডসেন্ট হোটেল এন্ড রিসোর্ট প্যাভিলিয়নের সিনিয়ির কনসালটেন্ট মোমেলা আক্তার মুন বলেন, মেলায় আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি হয়েছে প্রচুর। প্রচার ও প্রসার আশানুরূপ হয়েছে। মেলায় আমরা লাভবান।
নাদিয়া ফার্ণিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি সামসুল হক প্রধান বলেন, মেলার শুরুতে কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা আর যানজটে ক্রেতাদের আগমন হয়েছে কম। মেলায় আশানুরূপ ফার্ণিচার বিক্রি হয়নি। তবে প্রচার ও প্রসারে আমরা লাভবান হয়েছি।
ঢাকার খিলগাও থেকে স্বপরিবারে আসা গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, মেলায় আরো ২দিন ঘুরতে এসেছি। গুণগত মান ভালো থাকায় ও হোম ডেলিভারি সার্ভিস ফ্রি থাকায় এখন মূল্যছাড় পেয়ে ফার্ণিচার ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ক্রয় করেছি।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে আসা গৃহবধূ সালমা বেগম বলেন, মূল্যছাড়ে ব্যবহার যোগ্য গৃহস্থালী, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী ও বিদেশি পণ্য ক্রয় করেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া আবাসিক হলের ছাত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, প্রসাধনী সামগ্রী, জয়িতার তৈরি থ্রী-পিছ ও শাল ক্রয় করেছি। সকল স্টলেই পণ্য কেনা বেচা হচ্ছে প্রচুর।
এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাণিজ্য মেলার প্রথম দিকে কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা, ৩০০ফুট সড়কে ম্যারাথন দৌঁড়, টঙ্গীতে দ্বিতীয় দফা বিশ্ব ইজতেমা, মেলার সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে অবস্থিত ঢাকা বাইপাস সড়কের সম্প্রসারণ কাজে সৃষ্ট যানজটে ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে পারেনি। কেউ কেউ একবার আসলেও নানা প্রতিকূলতায় ভোগান্তিতে পড়ে দ্বিতীয়বার মেলায় আসেনি। তাই মেলার ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে আর্থিক ক্ষতির সমুখ¥ীন হতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনা ভাড়ায় আরো ৭দিন সময় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী বলেন, মেলা ৭দিন বাড়ানোর ব্যবসায়ীদের দাবি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। মেলার সময় বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ৩১ জানুয়ারি মেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।