এম.এ মোমেনঃ
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে স্থানীয়, দেশি ও বিদেশি দশ সহস্রাধিক মানুষ কর্মব্যস্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। কেউ স্কুলে কেউ কলেজে লেখাপড়া করছে। কেউবা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবার কেউবা লেখাপড়া শেষ করে চাকরির প্রার্থী কিংবা বেকার জীবন যাপন করছিলেন। মেলায় বিদেশি দশটি স্টলে দেড় শতাধিক মানুষ কর্মব্যস্ত রয়েছে। দেশি ২১৫টি স্টলের বিভিন্ন বিভাগে প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ কাজ করছেন।
মেলাকে ঘিরে আশপাশের ইজিবাইক, রিক্সা, অটো চালক-হেলপারসহ ইলেক্ট্রিশিয়ান, ডেকোরেটরের মালিক, টিকিট বিক্রেতা-চেকার, বাসাবাড়ির মালিক-প্রহরী ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ। তাদের অধিকাংশই মেলাকে ঘিরে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর তাদের কেউবা স্টলের কর্মচারি, বিক্রয় প্রতিনিধি, হিসাব রক্ষক কিংবা খাবার সরবরাহকারী। কেউবা মেলার সাজ-সজ্জার কাজে নিয়োজিত। কেউবা মেলায় প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন। আবার কেউবা খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্টল, মেলার প্রাঙ্গনের বাইরে দোকানপাট গড়ে তুলেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজউকের পূর্বাচল উপশহরের ৪নং সেক্টরে বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর বসেছে। মেলার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের গুতিয়াবো, মধূখালি, পিতলগঞ্জ, মনিপাড়া, মাঝিপাড়া, শিমুলিয়া, বাগরাইয়ারটেক, গোবিন্দপুর, কালনী, টেকদাশেরদিয়া, ব্রাহ্মণখালীসহ প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুরে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের বাসা ভাড়া এখন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হয়েছে। বাড়ির মালিকরা বলছেন বাণিজ্য মেলা চলবে একমাস। বাসা খালি করে পুনঃরায় ভাড়া দিতে সময় লাগবে আরও একমাস। তাই ক্ষতির সমপরিমাণ টাকা আদায়ের জন্যই বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মেলাকে ঘিরে অটো, সিএনজি চালিত অটো রিক্সা চলছে দেদারসে। সুযোগ পেয়ে তারা ভাড়া দেড় থেকে দুইগুণ বৃদ্ধি করেছে। তবে আশপাশের প্রায় দেড় হাজার পরিবহন মালিক ও চালকের আয়ের উৎস এখন মেলার উপর নির্ভরশীল। মেলার সময় ছাড়া তাদের সংসার চলে অভাব অনটনের মধ্যে।
মেলার স্টলে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য বিক্রিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দোকানিরা। মেলার গাজী গ্রুপের প্যাভিলিয়নে বিক্রয় প্রতিনিধি স্থানীয় সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের ছাত্রী বৃষ্টি আক্তার বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বেকার ছিলাম। সুযোগ পেয়ে স্টলে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছি। আয়ের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা বাড়ছে।
আক্তার ফার্নিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন বলেন, শো-রুমের চেয়ে বাণিজ্য মেলায় বিশেষ ছাড় দিয়ে আমাদের পণ্য বিক্রি করছি। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
খাবারের দোকান পূর্বাচল মি. ব্রাইটের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ খোকন বলেন, বাসা বাড়ির মতো করে শরিষার তেল দিয়ে খাবার রান্না করছি। সাড়া পাচ্ছি বেশ। স্বাস্থ্য সম্মত হওয়ায় ক্রেতাদের এখানে ভিড় লেগেই থাকে। এখানে চল্লিশ জন যুবক বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন।
খাবারের দোকান বিজয়-৭১ এর মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, স্টলের অধিকাংশ কর্মচারীই বেকার ছিল। তাদের নিয়েই চলছে এ প্রতিষ্ঠান।
সেভয় আইসক্রিমের বিক্রয় প্রতিনিধি মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী পুষ্প রহমান সোহা বলেন, লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই এ কাজে প্রথমবারের মতো যোগদান করেছি। তাতে আয় এবং অভিজ্ঞতা দু’টোই অর্জন করছি।
নারায়ণগঞ্জের গোয়ালপাড়া গ্রাম থেকে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বপরিবারে ঘুরতে মেলায় এসেছেন। কেনাকাটাও করেছেন। বিক্রয় প্রতিনিধিরা শিক্ষিত হওয়ায় কম কথায় পণ্য কেনা তার সহজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
গুতিয়াবো গ্রামের বাসা বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, বাসাবাড়ি দুইমাস খালি রেখে একমাস ভাড়া পেয়েছি। ভাড়াতো তিনগুণই হওয়ার কথা। তবে মেলার পার্শ্ববর্তী পূর্বাচলের সেক্টরগুলোতে বাড়ি নির্মাণ হয়ে গেলে এ অবস্থা থাকবে না। তাছাড়া কয়েক বছরের মধ্যেই এখানকার আবাসিক সমস্যা কেটে যাবে।
এছাড়া মেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৮০ জন, পুলিশ ১ হাজার ৬’শ জন, আনসার ১’শ জন, সিকিউরিটি গার্ড ৫০ জন ও ক্লিনার ৮০ জনসহ সরকারি দুই সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মাচারী ব্যস্ত রয়েছেন।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে অনেকেরই নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয়দের জন্য মেলাটি আর্শিবাদ। তবে করোনার নতুন ভাইরাস ওমিক্রনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় মেলার সাথে সম্পৃক্ত সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য তিনি আহবান জানান।