আজ বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বন্দরে ভোটে শঙ্কার ছায়া

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
বন্দর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো বন্দরজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে। তবে, এর পাশাপাশি শঙ্কাও প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। ৮ মে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরণের অজানা আশঙ্কা বাসা বেঁধেছে। তাদের ধারণা এদিন সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা এখানে ঘটতে পারে। বিশেষ করে মুছাপুর ও মদনপুর ইউনিয়নে এমন সম্ভাবনা একটু বেশি বলেই তারা মনে করেন।
সূত্র বলছে, এবারের নির্বাচনকে উন্মুক্ত রেখেছে ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে তারা কাউকে সমর্থন বা মনোনয়ন দেয়নি। ফলে এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিষয়টিও নেই। তবে, ক্ষমতাসীনরা ঘোষণা অনুযায়ি প্রার্থী না দিলেও স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি একদমই ভিন্ন। বন্দরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বিগত ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ননে নির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ রশীদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও জাতীয় পার্টি নেতা মাকসুদ হোসেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রশীদের পক্ষে স্থানীয় সাংসদসহ পাশর্^বর্তী সাংসদও গলদঘর্ম। তাদের অনুসারি নেতাকর্মীরা মাঠে বেশ তোড়জোড় করছেন নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করাতে। নানাভাবেই তারা রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এমনকী ভোটগ্রহণের দিন রশীদের পক্ষে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারেরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এদিন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। নিজেদের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে সবরকম চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও এক ধরণের সংশয় বিরাজ করছে।
যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে করাটাই তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এই নির্বাচনে কোনো ধরণের গোলযোগ করার চেষ্টা করলে কঠোর হস্ত তা দমন করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। সম্প্রতি তিনি বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে মত বিনিময় সভা বক্তব্যকালে ওই ঘোষণা দেন।
মাহমুদুল হাসান বলেছেন, ‘আগামী ৮ মে যেহেতু জেলার মাত্র একটি উপজেলাতেই নির্বাচন, তাই সকল ফোর্স সেখানেই নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে পুরো নির্বাচনী এলাকায়। নির্বাচনের দিন আমার চোখ বন্ধ থাকবে। যে যাই বলুক না কেন, আমি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবো।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘কেউ এক পার্সেন্টও মনের মধ্যে ধারণা রাখবেন না যে, নির্বাচন কোনোভাবে ম্যানুপুলেট (হেরফের) হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আপনাদের এটা আমি বলে যাচ্ছি। যেহেতু একটা উপজেলা ইলেকশন, তাই আমাদের সকল ফোর্স এদিকেই থাকবে।’
এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া প্রসঙ্গে আশ^স্ত করা হচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষ এতে আশ^স্ত হতে পারছেন না। তাদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি নাসিম ওসমানের মৃত্যুকার্ষিকী উপলক্ষে বন্দরে গিয়েছিলেন সাংসদ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান। সঙ্গে ছিলেন তাদের অনুগামি নেতাকর্মীরাও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়সহ তাদের অনুগামি নেতাকর্মীরা সেদিন বক্তব্যকালে এম এ রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হুমকিমূলক বক্তব্য রাখেন। এরমধ্যে ওসমান ভ্রাতৃদ্বয় রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের প্রার্থী মাকসুদ হোসেন ও চিংড়ি প্রতীকের প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। পাশাপাশি তারা দুজনও হুমকিমূলক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়েছে।
তবে, সচেতম হল বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেহেতু নির্বাচনে মন্ত্রী এমপিসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। সেহেতু প্রশাসনকে সেদিক নজরে রেখে নির্বাচনকে শতভাগ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাওয়া অত্যাবশ্যক। এর ব্যাত্যয় ঘটলে সরকারেরই সুনাম নষ্ট হবে। ফলে তাদের উচিৎ সরকারের সুনাম যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর রাখা। এখন দেখার বিষয় ৮ মে বন্দর উপজেলা নির্বাচন কতটা সুষ্টু ও নিরপেক্ষ হয়।