নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কয়েক বিষয়ে ফেল করা পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে কোন প্রকার সুযোগ দিবেননা বলে জানিয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন প্রধান শিক্ষক ফজলুল কবির। বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান উন্নয়নের স্বার্থে যা যা করা দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জানা যায়, ফজলুল কবির দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই নিজের পকেট ভরা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বিদ্যালয়ে তার পরিবার নিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস,বিদ্যুৎ,বাসস্থান, ব্যবহার করে আসছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী এবং অভিভাবকরা বলছেন,‘তিনি যোগদানের পরপরই বিদ্যালয়টাকে নিজের ঘরবাড়ি করে ফেলেছেন। বিদ্যালয়ে কোন ছাত্র-ছাত্রী এ বিষয়ে কোন কথা বললে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষসহ এই শিক্ষক (ফজলুল কবির) বিভিন্ন প্রকার হুমকিও দিয়ে থাকেন । তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি যা বলবেন তাই হবে। আসমা বেগম নামে এক অভিভাবক তিনি বলেন, তারা নিজেদের ইচ্ছে মত নোটিশ বোর্ডে টাকা আদায় করার চার্ট টানিয়ে দেয়। বিজ্ঞান বিভাগ ২ হাজার ২৫০ টাকা, ব্যবসা শিক্ষা এবং মানবিক ২ হাজার ১৫০ টাকা। ফি জমাদানের শেষ তারিখ ১১ নভেম্বর। আদেশক্রমে প্রধান শিক্ষক মো.ফজলুল করিব। তিনি আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় জানতে পেরেছি ‘পরীক্ষার ফি ছাড়া অন্য খাতে এর সঙ্গে অর্থ আদায় করা যাবে না। অনৈতিক অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের ম্যানিজিং কমিটিকে শোকজ করা হবে। এমপিওভুক্ত হলে এমপিও স্থগিত করারও সুযোগ আছে প্রশাসনের। কিন্তু কিছুইতো হতে দেখছি না। এদিকে শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ের ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। তারা (বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) কোন ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুলে টিফিন চলাকালীন সময় বাধ্যতামূলক তাদের নিজস্ব ‘ক্যান্টিন’ থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। বাসাবাড়ির খাবার এবং বাহিরের খাওয়া নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের কাছে কোচিং করতে হবে। নয়তো স্কুলে গেলে তারা (শিক্ষক) আমাদের ঠিকমত পড়াশোনা করান না। তারা সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজেদের কোচিং সেন্টার নিয়ে। এভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে তাদের সবারই রয়েছে চার তলা পাঁচ তলা বাড়ি। এতো টাকা কোথা থেকে আসে? এইসব শিক্ষকরা বাসায় গিয়ে পড়ালে তাদের পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়; তা-ও সপ্তাহে তিনদিন পড়ান। এইসব নানা অভিযোগের বিষয়ে দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ফজলুল কবির বলেন, এই আসনের এমপি এ.কে.এম শামীম ওসমান ফেল করা পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে আমাকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তিনি জনপ্রতিনিধি হলেও এ নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। উনার চিঠির নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা প্রশাসনের অধীন, উনার অধীন নই। অন্যান্য বিদ্যালয়ের ব্যাপক সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমি অন্যান্য বিদ্যালয়ের মত শিক্ষক না; আমার কাছে ফেল করা পরীক্ষার্থীদের কোন সুযোগ নেই। তারা (অন্যান্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়) গ্রেজ দিয়ে উত্তীর্ণ করেছে সেটা তাদের ব্যাপার বলে জানান। দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিবছরের তুলনায় এইবার একটু ফেল বেশিই করেছে। এই বিষয়ে আমাকে শামীম ওসমান উত্তীর্ণ করার জন্য বলেছেন। কিন্তু আমরা সরকারী জটিলতার কারণে তাদের উত্তীর্ণ করতে পারি নাই। অন্যান্য বিদ্যালয় কিভাবে (১০-১২) নাম্বার গ্রেজ দিয়ে তিন-চার বিষয় ফেল করা পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ করেছেন তা জানিনা। আমরা এক বিষয়ে ফেল করা কিছু পরীক্ষার্থীদের (৫-৭) নাম্বার গ্রেজ দিয়ে উত্তীর্ণ করেছি। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে বাসস্থান বিষয়ে বলেন, শুধু তিনিই নন তার আগে যারা এই বিদ্যালয়ে চাকরি করেছেন তারা এই বিদ্যালয়ে থেকে গেছেন। তিনি আরো বলেন, একটি এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ে কোন প্রধান শিক্ষক বাসস্থান থাকতে পারে কি-না তা আমারও জানা নেই। যদি বাসস্থান ব্যবহার না করার সরকারী আদেশ থাকে তাহলে তিনি থাকতে পারবেন না। সে জন্য তো আর বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা নষ্ট করা যাবেনা। শামীম ওসমানের সাথে মুঠোফোনে আলাপ হলে তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে এবার বহু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা বেশ কয়েক বিষয়ে ফেল করেছে। আমি এইসব সব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষককে বলেছি। অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৭-১২) নাম্বার গ্রেজ দিয়ে যতটুকু সম্ভব তা করেছেন। দেলপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেও অন্যান্য বিদ্যালয়ের মত করতে বলেছিলাম। কিন্তু দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মেনেজিং কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক কেন রাখলোনা সেটা আমার জানা নেই বলে জানান।