পূর্বাচলের আদিবাসিন্দদের ভোগান্তি চরমে
রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পূর্বাচল উপশহরের আদিবাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্থদের ভোগান্তি এখন চরমে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ঘিরে পূর্বাচল উপশহর গড়ে ওঠছে। ক্ষতিপূরণ বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী। তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কোন সুফল পাচ্ছে না। তাতে এলাকাবাসীর দূর্ভোগ ও ভোগান্তি বেড়েই চলছে।
গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পূর্বাচল উপশহরের পাড়াবর্তা গ্রামের কৃষক আয়েত আলী। বয়স ৫২ বছর। পৈত্রিক সূত্রে তিনি সোয়া ছয় বিঘা জমির মালিক। অন্যান্য জমির ন্যায় আয়েত আলীর জমিও ভূমি হুকুম দখল করা হয়। হুকুম দখলকৃত জমির ক্ষতিপূরণ বিল, ঘর-বাড়ি ও গাছের বিল উত্তোলন করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতায় তিনি পড়েছেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী গাজীপুর জেলা ভূমি হুকুম দখল অফিসে বিল উত্তোলন করার জন্য নথি তৈরি করে জমা দেন আয়েত আলী। কিন্তু গাজীপুর জেলা ভূমি হুকুম দখল অফিসের সার্ভেয়ার বেলাল হোসেন সে কাজের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছেন। তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আয়েত আলী বিল উত্তোলন করতে পারছে না। বড়কাউ গ্রামের আম্বর আলীও দীর্ঘদিন ঘুরেও ক্ষতিপূরণ বিল পায়নি। পরে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে জমির ক্ষতিপূরণ বিল তুলেছেন। কালীকুটি গ্রামের মিয়াজ উদ্দিন, বুরুলিয়া গ্রামের আলী হোসেনসহ আরো অনেকেই ঘুষের টাকা দিয়ে জমির ক্ষতিপূরণ বিল উত্তোলন করেছেন। আবার এক জনের বিল অন্য জনেও তুলে নিয়ে গেছে।
ভূমিমন্ত্রী ও ভূমি মন্ত্রীর সচিবের কাছে ভূক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, গাজীপুর জেলা ভূমি হুকুম দখল অফিসের সার্ভেয়ার বেলাল হোসেনের এসকল অপকর্ম অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন। সার্ভেয়ার বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অন্ত নেই। পূর্বাচল উপশহরের ক্ষতিগ্রস্থ ও আদিবাসিন্দাদের ভোগান্তি এখন চরমে। দিন দিন তাদের হয়রানি ও ভোগান্তি বেড়েই চলছে। বাপদাদার বসতভিটা, জমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ বিল তুলতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী সংকটে পড়ছে। গাজীপুর জেলার ভূমি হুকুম দখল অফিসের সার্ভেয়ার বেলাল হোসেনের নানা অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ দিন দিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের আদিবাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্থদের এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট প্রদান ও ক্ষতিপূরণ বিল উত্তোলনে গাজীপুর জেলা ভূমি হুকুম দখল অফিসের সার্ভেয়ার বেলাল হোসেন ব্যাপক অনিয়ম করছেন। উৎকোচের বিনিময়ে তিনি একজন কৃষকের জমির বিল ও এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট অন্য জনকে দিয়ে দিচ্ছেন। জমির মালিকদের বিভিন্ন কৌশলে হয়রানি করছেন। আজ নয় কাল এইভাবে জমির মালিকদের এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট দিচ্ছেন না। তাতে করে জমির মালিকরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে ভুয়া এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেটও প্রদান করছেন।
ভূমি হুকুম দখল অফিসের অপকর্ম করতে তিনি শুক্র ও শনিবার রাত পর্যন্ত অফিস করছেন। কখনো কখনো পিছনের তারিখেও বেলাল হোসেন স্বাক্ষর করছেন। ভুয়া এ্যাওয়ার্ড সাটিফিকেট তৈরি ও প্রদান করে তার ক্ষতি পূরণ বিল সার্ভেয়ার বেলাল হোসেন তুলে নিচ্ছেন। একেকটি ভুয়া এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেটে ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা তিনি আদায় করে নিচ্ছেন। এই সার্টিফিকেটে ভূমি হুকুম দখল করা জমির পরিমাণ, মৌজার নাম, এসএ ও আরএস দাগ নং, ঘর-গাছের ক্ষতিপূরণ বিল, প্রাপ্ত মোট টাকার পরিমাণ ও জমির মালিকের পরিচয় লিপিবদ্ধ থাকে। পূর্বাচলে আদিবাসিন্দা কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ ক্যাটাগরিতে প্লট পেতে অন্যতম শর্ত হচ্ছে এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট। এ সার্টিফিকেট পেতে একটি জালিয়াতচক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। জালিয়াতচক্র ও সার্ভেয়ার বেলাল হোসেন এসকল অনিয়ম অবাধে করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জমির খাজনা, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নামজারি, পর্চা ও দলিল জাল করে এক জনের জমির বিল অন্যজনে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ইতিমধ্যে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সার্ভেয়ার বেলাল হোসেনের এসকল অনিয়মে গাজীপুর জেলা ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
পূর্বাচলের পাড়াবর্তা গ্রামের জমির আলী বলেন, তার দেড় বিঘা জমির বিল জালিয়াত চক্র তুলে নিয়ে গেছে। বড়কাউ গ্রামের আম্বর আলী বলেন অনেকদিন ক্ষতিপূরণ বিলের জন্য ঘুরে ব্যর্থ হয়ে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে জমির ক্ষতিপূরণ বিল তুলতে হয়েছে।
অভিযুক্ত সার্ভেয়ার বেলাল হোসে বলেন, জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই ক্ষতিপূরণ বিল ও এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছে। তাতে কোন অনিয়ম করা হচ্ছে না।
গাজীপুর জেলার ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, পূর্বাচলের ক্ষতিপূরণ বিল ও এ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।