আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নয়া মেরুর উত্থান

স্টাফ রিপোর্টার :

একদা ওসমান পরিবারই ছিলো নারায়ণগঞ্জের সর্বময় কর্তা। এ জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছিলো এমপি শামীম ওসমানের তালুবন্দি। সেই ধারা থেকে নারায়ণগঞ্জের নেতাদের বৃহৎ একটি অংশ বেড়িয়ে এসেছে বহু আগেই। দলে সিটি মেয়র আইভীর সক্রিয়তার পর উত্তর-দক্ষিন নামে দুই মেরুতে ভাগ হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এবার উত্তর-দক্ষিন মেরুর বাইরে তৈরী হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ছে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) তার পুত্র গোলাম মর্তুজা পাপ্পা এবং আড়াহাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর। বিশেষ করে শহরে অবস্থিত দক্ষিন মেরুর নেতাদের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পাশে দেখা যায়, যারা মন্ত্রীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে রাজনীতিতে বিচরণ করছেন।

জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠন সহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্পন্ন প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতীক) সমর্থনে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। মেয়র আইভী, এমপি বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু ও জিএম আরাফাত সহ প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতি আস্থাশীল।

মূলত, মন্ত্রী গাজী রাজনীতিতে দক্ষ, প্রবীন এবং পরীক্ষিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি সর্বদা কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখেন। রাজনীতিতেও একজন ক্লিন ইমেজের অধিকারী তিনি। তাই মন্ত্রী গাজীর প্রতি আস্থা বাড়ছে রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার এবং শহরের নেতাদের।

এদিকে, মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র গোলাম মর্তুজা পাপ্পা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান গড়ে তুলছেন। উদীয়মান এই নেতা বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এবং রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কেবল রূপগঞ্জেই নয়, বরং নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজনীতিতেও নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই শহরে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে মন্ত্রী গাজী এবং তার পুত্র পাপ্পা গাজী প্রসংশনীয় ভূমিকা রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নজর কেড়েছে পাপ্পা গাজীর বিশাল শোডাউন। সবশেষ গত ১১ নভেম্বর যুবলীগের মহাসমাবেশে রূপগঞ্জ থেকে ১০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়ে ঢাকায় অংশ গ্রহণ করেছেন পাপ্পা গাজী। তার এই বিশাল শোডাউন নজর কেড়েছে সবার।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর গ্রহণ যোগ্যতাও বাড়ছে। তিনি টানা তিন তিনবার ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই তুখোড় নেতার রয়েছে বিশাল কর্মী সমর্থক। এছাড়া, বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় গণমাধ্যমে নিয়মিত কথা বলছেন এমপি বাবু। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তার আবেদন বাড়ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এমপি বাবুকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার জোড়ালো দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত পুরনো নেতাদের স্বপদে বহাল রাখায় তার কর্মীরা কিছুটা হতাশ হয়েছেন। তবে, জেলা আওয়ামী লীগের আসন্ন পূর্নাঙ্গ কমিটিতে তার প্রভাব থাকবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, দলীয় ইস্যু ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এবং সরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে থাকছেন মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। প্রশাসন ও সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর কদর রয়েছে।

বোদ্ধা মহল বলছেন, একদা শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে ছিলো নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা। তিনি প্রবীন নেতাদের উপর ছড়ি ঘুড়িয়েছেন। তার সাথে মতের অমিল ঘটলে তিনি সিনিয়র নেতাদেরও লাঞ্ছিত করেছেন- এমন অতীত রয়েছে। তাই প্রবীন ও পরীক্ষিত নেতাদের অনেকেই শামীম ওসমানের বলয় থেকে বেড়িয়ে এসেছেন। নেতাদের মুখে শোনা যায়, কেন্দ্রেও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই শামীম ওসমান। অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন ধারা তৈরী করছেন মন্ত্রী গাজী ও তার সমর্থকরা। এতে নয়া মেরুর আভাস মিলছে রাজনৈতক অঙ্গনে।