নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে হেভীওয়েট দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ভোটের আগে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন নৌকা ও হাতি প্রতীকের এই দুই মেয়র প্রার্থী। আবার দুই প্রার্থীকে কেন্দ্র করে নানা চরিত্র অবলম্বনে আরো বেশ কয়েক জন এসেছেন আলোচনায়। যাদের কেউ কেউ বিদ্ধ হয়েছেন সমালোচনার তীরও। ফলে কখনো কখনো প্রার্থী ছাপিয়ে ক্যামেরার ফোঁকাস পড়েছে তাদের দিকেও। প্রার্থী না হয়েও নির্বাচনি এই মঞ্চে ক্যামেরার ফোঁকাসে আসা এমন ব্যক্তির তালিকা এমশই দীর্ঘতর হচ্ছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার শুরুর দিকেই সমালোচনায় বিদ্ধ হন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে অর্থের প্রয়োজন দেখিয়ে সোনারগাঁ থানা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন খোকন সাহা। হুমকিও দিয়েছেন ওই যুবলীগ নেতাকে। গত পহেলা জানুয়ারি খোকন সাহা এবং যুবলীগ নেতা নান্নুর মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। যা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। খোকন সাহার ওই ফোনালাপ ফাঁসের পর নারায়ণগঞ্জ ছাপিয়ে গোটা দেশেই সমালোচনায় বিদ্ধ হন তিনি। এরপর থেকে খোকন সাহার মুখে কোন রা নেই।
এদিকে, খোকন সাহা পর্ব শেষ হতে না হতেই আলোচনায় আসেন ওসমান পরিবার। জানা গেছে, বন্দর উপজেলার চার ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয় পার্টির চার চেয়ারম্যান নৌকার প্রার্থীর বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নেন। এতে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান এবং তার ভাই শামীম ওসমান নৌকা প্রেমিদের ক্ষোভের কারণ হন। কারণ, ওই চার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সেলিম ওসমান তথা ওসমান পরিবারের অনুসারী। এরপর থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে ওসমান পরিবারের প্রার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেন খোদ নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।
এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক নৌকার প্রচারণায় এসে এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নানক বলেন, আমরা জীবিত থাকতে আগামীতে আপনাকে নৌকা পেতে দেব না। এই বক্তব্যের মাধ্যমে শামীম ওসমানের পাশাপাশি আলোচনায় আসেন কেন্দ্রীয় নেতা নানকও।
এরই মধ্যে শামীম ওসমানকে গডফাদার বলে পরিবেশ উত্তপ্ত করেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী। এই অবস্থায় গত ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন শামীম ওসমান। ওই সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় ছিলেন আলোচিত এই সাংসদ।
এদিকে, সংসদ সদস্য হয়েও সংবাদ সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে নামার ঘোষণা দিয়ে আচরণ বিধি ভঙ্গ করে বসেন শামীম ওসমান। তা নিয়েও খবরের পাতা ও টিভির পর্দায় সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
এর আগে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে না নামায় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় কেন্দ্র। বিলুপ্ত হওয়া কমিটি নিয়ে যখন নানাগুঞ্জন শুরু হয় নারায়ণগঞ্জে, তখন একই তারিখ রাতে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের মাসদাইরস্থ বাসায় তল্লাশী অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভিন্ন দিকে মোড় নেয় আলোচনা। এতে ঘিঁ ঢালেন বিএনপি থেকে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। এক বক্তব্যে তিনি ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদকে তার কর্মী তুলনা করেন এবং রিয়াদের বাসায় পুলিশের অভিযান নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করেন। এতে বাতাসে ভাসা গুঞ্জন মোটা দাগের প্রশ্নে পরিণত হয় যে, বিলুপ্ত হওয়া ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি রিয়াদ কি তবে তৈমূরের নির্বাচনি কর্মী ছিলেন? প্রসঙ্গত, রিয়াদ সাংসদ শামীম ওসমানের অন্যতম কর্মী এবং সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
এরই মধ্যে ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তৈমুর আলম খন্দকারের নির্বাচনি সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে। রবি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। তাকে গ্রেফতারের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন এই বিএনপি নেতা।
এদিকে, ভিন্ন চরিত্রে আলোচনায় এসেছেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। যিনি আদোতে বিএনপি নেতা হলেও ওসমান পরিবারের অশির্বাদে হৃষ্ট পুষ্ট হয়েছেন। তাকে তৈমুরের নির্বাচনি প্রচারণায় দেখা না গেলেও তিনি প্রায় প্রতিরাতে তৈমূরের বাড়িতে ঢুঁ মারেন। অভিযোগ উঠেছে, ওসমান পরিবারের সাথে তৈমুরের নির্বাচনি যোগসাজসের বিশেষ কাজে রয়েছেন আজাদ বিশ্বাস। এই বিষয়ে গতকাল সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক সংবাদচর্চায়। তা নিয়ে বর্তমানে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগ ঘেঁষা এই বিএনপি নেতা।