তাওসিফ মাইমুন: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতায় নির্বাচনি পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ এবং এই নির্বাচন রক্তক্ষয়ীর দিকে এগুচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
বুধবার পুরানো পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক সংবাদ সম্মেলন নির্বাচনি প্রচারণার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফ্রন্টের নেতারা এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আসলে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ যে ভাষায় বুঝাতে পারবো না। আজকেও আমার নির্বাচনি এলাকায়(ঢাকা-৭) আমরা প্রচারণার সময়ে কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সারাদেশে এরকম অবস্থা। রাষ্ট্রপতির এলাকা থেকে ধানের শীষের প্রার্থী ফজলুর রহমান আমাকে জানিয়েছেন, পুলিশ বলে দিয়েছে আপনারা এলাকা থেকে বেরিয়ে যান। না হলে পরিণতি ভালো হবে না। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আপনরা বুঝেন কি অবস্থা।
‘আসলে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ যে ভাষায় বুঝাতে পারবো না। মিডিয়ার ভাইরা আপনারা সহকর্মীদের মাধ্যমে সবকিছু জানতে পারছেন। আমরা বলে বুঝাতে পারবো না কী অবস্থায় আমরা আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে হামলা-মামলা তো আছেই, পুরো বাংলাদেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছে সরকার। এই কারাগারের মধ্যে সকলে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী। গত কয়েক সপ্তাহে আমার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-৬ আসন থেকে তিন‘শ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিলো না। নতুন নতুন মামলা দিয়ে তাদের জামিনও বন্ধ করে রেখেছে।
‘এখনো পর্যন্ত আমাদের কর্মীরা মাঠে নামতে পারেনি। যখনই নামে বিড়াল ছানার মতো ধরে নিয়ে যায়। ঢাকাসহ সারাদেশের অবস্থা দেখে আমাদের মনে হচ্ছে একটা রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সরকার ও নির্বাচন কমিশন কেনো এই অবস্থা সৃষ্টি করলো আমাদের কাছে আজকে বড় প্রশ্ন।
সেনা মোতায়েন সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণ আশা করেছিলো সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরে পরিবেশ উন্নত হবে, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে এবং তারা প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন। সেটাও আমরা দেখছি যে, আমাদের সেই আশা হতাশায় পরিণত করেছে।
‘সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের আবেদন এখন পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে আপনারা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। জনগণের আস্থা আপনাদের সাথে আছে এবং সেই আস্থায় আপনারা আগামী কয়েকদিন মাঠে থেকে কার্যকরি ব্যবস্থা নেবেন। আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য অপেক্ষায় আছে।’
সুব্রত দাবি করে বলেন, দেশের ৯০ ভাগ ভোটার আজকে ধানের শীষে ভোট দেবার জন্য উতালা হয়ে আছে। ৩০ তারিখ যদি তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে বাংলাদেশে একটা নিরব ভোট বিপ্লব হয়ে যাবে। আমি সরকারকে বলব, মাথা ঠান্ডা রেখে ভবিষ্যত বাংলাদেশে যাতে তার স্বাধীনতা, গণতন্ত্র রক্ষা হয় সেজন্য কাজ করবেন। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণকে আর প্রতারিত করবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশি হামলা, মামলা, নির্বাচনি প্রচারের বাঁধা প্রদানসহ সহিংস ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন ফ্রন্টের সমন্বয় কমিটির প্রধান গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক।
সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অর্পনা রায়, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক, গণদলের গোলাম মওলা চৌধুরী, মানবাধিকার সংস্থার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।