আজ সোমবার, ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নাসিক কাউন্সিলরা ক্রমশ সন্ত্রাসে রূপ নিচ্ছে !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলররা ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তথা দিনদিন সন্ত্রাসী রূপ ধারণ করছেন তারা। এর কারণ অনুসারে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তারা। তবে বর্তমান আলোচিত বিষয় হলো কাউন্সিলর কবীর হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পালটা- ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনাটি। যার ফলে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে দিনদিন আস্থা হারিয়ে ফেলছে জেলার সাধারণ মানুষ। একের পর এক আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন নির্বাচিত কাউন্সিলররা। ওইসব ঘটনাগুলো কখনোই আশা করেনি এ জেলার সাধারণ মানুষ। জনপ্রতিনিধিদের এমন রুপ প্রকাশ করায় আতঙ্কিত নগরবাসী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) কাউন্সিলরদের সন্ত্রাসী রূপ ধারণ করার বিষয়ে ধারাবহিকভাবে গত রবিবার নাসিক ১৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিন নলুয়া পাড়া এলাকায় একটি মসজিদ কমিটির ফান্ডের আর্থিক হিসাব নিয়ে দ্বন্দের জের ধরে কাউন্সিলর কবীর হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পালটা- ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছেন।

গত রবিবার বিকেলে কাউন্সিলর কবিরের ভাগিনা টিটু বর্তমান কমিটির কাছে টাকার হিসাব চাইলে তাকে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয় সাবেক কাউন্সিলর মুন্না ও তার পক্ষের লোকজন। এ নিয়ে রবিবার রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের সমর্থক লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর হামলা করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পরলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এবং সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারী সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে দুই কাউন্সিলরের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধাস্তি ঘটনায় বেশ আলোচনা চলছে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। যারা মানুষের সমস্যার সমাধান করবে তারা কিনা নিজেরা নিজেরাই সন্ত্রাসীরুপ ধারণ করছে। সেই ঘটনার এক পর্যায়ে ব্যাক্তিগত অস্ত্র উচিয়ে কাউন্সিলর ফারুক আরেক কাউন্সিলরকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সে ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত না হলেও জনসাধারনের মধ্যে অনেকটা আতংক বিরাজ করেছে।

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডে আদমজী নতুন বাজার এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতিকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনার জের ধরে উভয় পক্ষের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়।

জানা যায়, আদমজী নতুন বাজার এলাকায় সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের সমর্থক আবদুল হান্নান ও ইসমাইলদের সঙ্গে প্যানেল মেয়র মতির সমর্থক আ. রাজ্জাক নামের একজনের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। ওই বিরোধ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই শালিস বৈঠকও হয়।

সে ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজন আবারো জড়ো হলে প্রথমে বাক বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এসময়ে মতি অকথ্য ভাষায় আ. হান্নান ও ইসমাইলকে গালাগাল করে। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মতিকে কুপিয়ে জখম করা করে। মতিকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে সাইনবোর্ড এলাকার প্রো এক্টিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাতখুনের প্রধান আসামী নূর হোসেনের ভাতিজা নাসিক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ছিলেন প্রথম এজহারভুক্ত আসামী। যদিও পরবর্তীতে তাকে মামলা থেকে নিষ্পত্তি করা হয়। ২০১৫ সালে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল গ্রুপের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে।

গত বছর ৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো নিয়ে বাকবিতন্ডার জের ধরে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের সঙ্গে বিদ্যুতের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম রাজুর মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। প্রকৌশলীর দাবী উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে তার উপর চড়াও হয় কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলর দাবী করেন তিনি কোন মারধর করেনি।

জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ডে সম্প্রতি বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে এসব বাতি নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে ৩ অক্টোবর বুধবার দুপুুর ৩টা ১০ মিনিটে সহকারি প্রকৌশলী রেজাউল করিম রাজুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন দুইজনই ফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেন। ফোনেই দু’জন একে অপরের উপর চটে যান।

পরে বিকেল সাড়ে ৩টায় শফিউদ্দিন প্রধান নগর ভবনে রেজাউল করিম রাজুর কক্ষে প্রবেশ করে মুঠোফোনে বাকবিতন্ডার বিষয়টি জানতে চান। তখন রেজা সাফ বলেন, এসব নিয়ে কৈফিয়ত দিতে পারবো না। এসব নিয়ে সেখানেও তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডা ঘটলে দুইজনই চেয়ার ছেড়ে দেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুনে ছুটে আসেন আশেপাশের লোকজন। তারা দু’জনকেই নিবৃত্ত করেন।
২০১৮ সালের ১৬ই জানুয়ারি হকার উচ্ছেদ কে কেন্দ্র করে সিটি মেয়র আইভীর সাথে স্বসস্ত্র অবস্থায় থাকার অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।

গত ৩ ডিসেম্বর চাষাড়ায় অবস্থিত হীরা মহলে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। সেখানে ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবু ও ১৮নং ওয়ার্ডের কামরুল হাসান মুন্নার সাথে তুমুল ঝগড়া হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সেখানে হাতাহাতিও হয়।
গত ১৯ জানুয়ারি নাসিক উন্নয়ন প্রকল্পের দুই প্রকৌশলিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবু। এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।