আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জে অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি

নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছড়াছড়ি। একদিকে চলছে বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান, অন্যদিকে দেয়া হচ্ছে সংযোগ। এতে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি বৈধ গ্রাহকরা সংকটে পড়লেও আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে কয়েকটি মহল।

অভিযোগ শোনা যায়, তিতাসের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করেই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, অসাধু জনপ্রতিনিধি এবং ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের যোগসাজসে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এই তিতাস কর্তৃপক্ষই আবার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণের ধুম ফেলে দেয়।

সচেতন মহলের ভাষ্য, অভিযান চালানো হলেও এর নেপথ্যে কারা তা খুঁজে বেড় করছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে আড়ালেই।

যদিও বৈধ গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনে বিচ্ছিন্ন হলেও রাতের আঁধারে সেই অবৈধ গ্যাসের সংযোগ পূনরায় দেয়া হয়।

জানা গেছে, গত বছর তিতাসের আওতাধীন এরিয়ায় দুই লাখ ২৩ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল এক লাখ ২৭ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ। মূলত, সবচেয়ে বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগের তালিকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জের নাম।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং ভোট টানার প্রতিশ্রæতিতে বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। আবার তিতাসের ঠিকাদারদের অনেকেই অবৈধ সংযোগ দেয়ার নেপথ্যে কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরকারের জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় ২০১৫ সাল থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রেখেছে তিতাস। তবে, ২০১৫ সালের পরও শহর কিংবা শহরতলীতে যেসব বাসাবাড়ি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তার বেশির ভাগেই রয়েছে তিতাসের গ্যাস সংযোগ।

সচেতন মহলের প্রশ্ন, রাষ্ট্রীয় ভাবে বন্ধ থাকলেও নতুন গড়ে উঠা এসব বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ এলো কিভাবে? এর নেপথ্যেই রয়েছেন কারা- তা নিয়ে রহস্যের দানা বেধেছে জনমনে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনাগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের বেশ কিছু এলাকায় দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে তিতাস। সবশেষ গত ১৬ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের উত্তর শান্তিনগর খালপাড় এলাকায় দুই হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস কর্তৃপক্ষ। এর আগে একই সংযোগ দুই বার বিচ্ছিন্ন করা হলেও সেখানে পূনরায় সংযোগ স্থাপন করে একটি মহল। এদিকে, তৃতীয়বারের অভিযানে একই স্থানে প্রায় ৫০০ বাড়ির ২ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও মাত্র চারজন অবৈধ গ্রাহককে কেবল ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যান্য অবৈধ গ্রাহকদের কেন আইনের আওতায় আনা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈধ গ্রাহকরা।

এই বিষয়ে তিতাসের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগ নারায়ণগঞ্জ জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ডিজিএম গোলাম ফারুক দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেছিলেন, ‘তিতাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণে প্রতিনিয়তই অভিযান চালিয়ে থাকে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বা বিভিন্ন সিন্ডিকেট অবৈধ পন্থায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেয়। এর সাথে তিতাস কর্তৃপক্ষের কারো হাত নেই। আমরা অবৈধ সংযোগের তথ্য পেলেই সেখানে অভিযান চালিয়ে থাকি। আর ধারা অনুযায়ী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়।’