সংবাদচর্চা রিপোর্ট
দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্রমশ রাজনীতির মাঠে দূর্বল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে ঘরছাড়া হয়ে পড়েছেন বহু মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী। রাজপথ কাঁপানো বহু নেতা পদ পদবী না পেয়ে ক্ষোভে দুঃখে দলের কর্মকান্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন হলো বিএনপি কী ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
জানা গেছে, বহু বছর পর গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। এরপর থেকে মামলা হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কেন্দ্রিয় রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নারায়ণগঞ্জে বারবার আগমনে এখন অনেকটা উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে পেছনে ফেলে আগামী দিনে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, বহু বছর পর জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সাথে বেশির ভাগ অঙ্গ সংগঠনের কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত তারা। আগামী দিনে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি।
কমিটি গঠনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যতা আসলেও কিছু কমিটি গঠনে কারো কারো অসন্তোষ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিগত দিনে নির্যাতন, হামলা, মামলা ও রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয়দের যাতে মূল্যায়ন করা হয় সে দাবি দলীয় কর্মীদের। সেই সাথে যত দ্রুত সম্ভব ‘বিএনপির ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি ঘোষণার দাবির মধ্যে গতকাল জেলা ও মহানগর যুবদলের খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো এ দুটি কমিটি রাজপথে কী ধরনের ভূমিকা রাখে। তাদের নিয়ে বিএনপি ও সাধারন মানুষের রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। তারা কী পারবে মানুষের কাঙ্খিত সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে?
জেলা যুবদলের সাত সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। শহিদুল ইসলাম টিটুকে সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। গতকাল সকালে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে অন্যান্যরা হলেন, সহ সভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী সালামত, সহ সভাপতি এ কে এম আমিরুল ইসলাম ইমন, সহ সভাপতি হারুন অর রশিদ মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাংগঠিনক সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম চয়ন। শহিদুল ইসলাম টিটু ছিলেন ফতুল্লা থানা যুবদলের সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকন ছিলেন রূপগঞ্জ যুবদলের সভাপতি।
অপরদিকে একই দিনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি করা হয়েছে বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে। তিনি সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের টানা তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি দপ্তর সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান দুলালের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি গঠনের এ তথ্য জানানো হয়। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মনতাজ উদ্দিন মন্তুকে। সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশো। তাদের মধ্যে মন্তু ও শোখন ছিলেন বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক। রশো হলেন খোরশেদের ভাগ্নে। তিনি মহানগর ছাত্রদলের সর্বশেষ আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। মহানগর যুবদলের কমিটির সভাপতি মাকসুদুল আলম খোরশেদও যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামী মহানগর যুবদলকে আরো শক্তিশালী করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে একাধিক নেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, নেত্রীর নির্দেশে আমরা নির্বাচন ও আন্দোলন দুটোরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এখন নির্বাচনমুখী। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে হলে সরকারকে প্রথমেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন- সব কিছুই নিয়েই গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই আমাদের আন্দোলন।