নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম তারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি নারায়ণগঞ্জে বর্তমান সময়ে যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা জীবিত রয়েছেন সেই ৭১’র সালের মুক্তিযোদ্ধা এবং এখনকার মধ্যে কোন তফাৎ পাবেন না। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কোন রাজনীতি করতে জানি না। আমরা এখনো নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আপনাকে সহযোগীতা করবো। স্কুলে যেতে বলেন স্কুলে যাবো। কলেজে যেতে বলেন কলেজে যাবো। যানজট নিয়ন্ত্রন করতে রাস্তায় নামতে বলেন আমরা রাস্তায় নামবো। আমরা চাই জেলা প্রশাসক এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র এক টেবিলে বসেন আমাদের দায়িত্ব দেন যেখানেই অরাজকতা আছে আমরা সেখানেই প্রয়োজনেই লাঠি হাতে নিবো। ৭১ সালে আমরা লাঠি হাতেই যুদ্ধে গিয়ে ছিলাম। আমরা বন্ধুক বা এসএলআর নিয়ে যুদ্ধ করতে যাই নাই। আমরা আরেকবার বেরুতে চাই নারায়ণগঞ্জের মানুষের শান্তির জন্য, নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। তারা যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব নিতে পারে এবং সেখানে যেন নারায়ণগঞ্জের মানুষের সংখ্যাই সব থেকে বেশি হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শ্যূটিং প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি আরো বলেন, আপনি বলেছেন আগামী এক মাসের মধ্যে বন্দর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে। আমি আপনাকে সম্পূর্ন সহযোগীতা করবো। আপনি শুধু বলেন আমাকে কোথায় কি করতে হবে। প্রয়োজনে ভূমি মন্ত্রনালয়ে গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে জমি ছাড় করিয়ে নিয়ে আসবো। বর্তমান সরকার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার পরেও জমি দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছিলো না। পরে ১৫ আগষ্টে আমি বাধ্য হয়ে ছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে সরকারের বরাদ্দকৃত সেই জমি দখল করার ঘোষণা দিতে। পরবর্তীতে আমি একাই সেই জমি দখলমুক্ত করেছি। সেখানে আজকে কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে আগামী ২৭ ডিসেম্বর যেটার উদ্ধোন হতে যাচ্ছে। বন্দরেও যদি একই ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা শিখে গিয়েছি কিভাবে জমি দখলমুক্ত করতে হয়। প্রয়োজনে বন্দরের মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমি দখলমুক্ত করে নিবো। আপনারা ভুলে যাবেন না এই বাংলাদেশটা মুক্তিযোদ্ধারাই পাকিস্তানের কাছ থেকে জন্মভূমিকে দখলমুক্ত করে নিজেদের দখলে নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে।
আগামী ২৩ ডিসেম্বর বন্দর সমরক্ষেত্র মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে ২৫ মার্চ আমরা ২০০জন মুক্তিযোদ্ধাকে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগীতা করতে পেরেছিলাম। এবারেও আমরা ২০০জন মুক্তিযোদ্ধাকে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগীতা করবো। জেলা কমান্ডার আমাকে ২০০ জনের নামের তালিকা প্রদান করবেন।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রাইফেল ক্লাবের সভাপতি রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিটের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী।
আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হায়দার খান কাজল, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই সকলেই লাল-সবুজ টি-শার্ট এবং মাথায় লাল টুপি পরে উপস্থিত হয়ে ছিলেন।