আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না ফেরার দেশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক

সংবাদচর্চা ডেস্ক:ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক আর নেই। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিট) লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)।

চিকিৎসকরা তার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র (ভেন্টিলেশন যন্ত্র) খুলে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী রুবানা হক, ছেলে নাভিদুল হকসহ আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বৃহস্পতিবার রাতে তার এপিএস মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

পারিবারিক সূত্র জানায়, শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তার বাসায় নেয়া হবে। ওই দিনই বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে তার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। শুক্রবার জুমার পর লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে আনিসুল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এপিএস মিজানুর রহমান  জানান, সোমবার সংক্রমণের কারণে আনিসুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থানান্তর করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে বৃহস্পতিবার লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। এর আগে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তার কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেয়া হয়।

মঙ্গলবার মেয়রের পরিবারের এক সদস্য বলেন, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে আবার আইসিইউতে নেয়া হয়। নাতির জন্ম উপলক্ষে ২৯ জুলাই সপরিবারে আনিসুল হক যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মস্তিষ্কের রক্তনালিতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস ধরা পড়লে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হলে ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়। মেয়র আনিসুল হক ৯ মাস ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

২০১৫ সালে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে তিনি ব্যাপক সংস্কার করেন। সিটি কর্পোরেশনে দুর্নীতি বন্ধে তিনি পদক্ষেপ নেন। এছাড়া ঠিকাদারদের বিল দ্রুত ছাড় করা, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, গুলশান বনানীতে ফুটপাত দখল মুক্ত করা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সরকারি বেশ কিছু জমি উদ্ধার করে আলোচনায় আসেন তিনি। এছাড়া পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা ফেরানোরও চেষ্টা করেন তিনি।

তার স্ত্রী রুবানা হক বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিন সন্তানের মধ্যে ছেলে নাভিদুল হক বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক, ওয়ামিক উমায়রা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনে কাজ করছেন। তানিশা হক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করে তিনি ১৯৮৬ সালে মোহাম্মদী গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এ গ্রুপ গার্মেন্টস পণ্য, আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বহুমুখী ব্যবসা পরিচালনা করে। ১৯৮০ থেকে ’৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন আনিসুল হক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন তিনি।

২০০৮-১০ সালে তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি এবং ২০০৫ ও ২০০৬ দুই মেয়াদের তৈরি পোশাক কারখানার মালিক পক্ষের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০-১২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসায়ীদের সংগঠন সার্ক চেম্বারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়া বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বিআইপিপিএ (বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি ছিলেন আনিসুল হক।

তার বাবার নাম সৈয়দ মঈনুদ্দিন ও তার মায়ের নাম ফাতেমা জোহরা বেগম। সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তার ছোট ভাই

মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে আরও শোক জানান- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রমুখ।