সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় ১৯৫২ সালে তৎকালীন মহকুমা-শহর নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের ব্যাপকতা ছিল অনেক। তবে নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। ফলে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির বাইরে ভাষাসৈনিকদের নিয়ে আর কোনো আয়োজন পরিলক্ষিত হয় না। সঠিক তালিকা না থাকায় অনেক ভাষা সৈনিকের নাম হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়। অন্যদিকে প্রতি বছরই জীবিত ভাষা সৈনিকদের সংখ্যা কমছে। অনেকেই জীবন সায়াহ্নে পৌঁছেছেন। তবে ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরেও সঠিক একটি তালিকা না হওয়াতে অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জের ‘সুধীজন পাঠাগার’ নিজস্ব উদ্যোগে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা সৈনিকদের একটি তালিকা করেছিল। ওই তালিকায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ১১০ জন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। ওই সময় জেলা প্রশাসনও উদ্যোগ নিয়েছিল ভাষা সৈনিকদের তালিকা করার। ওই তালিকা সংরক্ষণ করেননি তারা। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভাষাসৈনিকদের কোনো তালিকা তাদের কাছে নেই।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ বলেন, সুধীজন পাঠাগারের পাশাপাশি একবার জেলা প্রশাসনও ভাষাসৈনিকদের তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই সময় জেলা নাজির মাইনুল হক এই কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তালিকা করে ভাষাসৈনিকদের সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে হয়তো এই তালিকা তারা সংরক্ষণ করেনি।
সঠিক তালিকাই নয় ভাষা আন্দোলনের তৎকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের রচিত বইও তেমন একটা নেই। তবে গত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির লেখা ‘নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলন’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। ওই বইয়ে ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে লেখক লিখেছেন, ‘ভাষা সৈনিকের প্রশ্নে বিতর্ক রয়েছে। যেমনি বিতর্ক রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে। মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে বিতর্কের কারণ হচ্ছে সরকারের আর্থিক সহায়তা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান। কিন্তু ভাষা সৈনিকদের ক্ষেত্রে সে আর্থিক বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন না থাকলেও এখানে সমস্যাটি অন্য জায়গায়। ভাষায় আন্দোলনের সময় কী ভূমিকা থাকলে তাকে ভাষাসৈনিক বলা যাবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই।’
রফিউর রাব্বি আরও লেখেন, ‘কয়েক বছর আগে সারাদেশের ভাষাসৈনিকদের একটি তালিকা প্রণয়নের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তালিকা তৈরি হয়নি।’