আজ শনিবার, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া আতঙ্কে নারায়ণগঞ্জবাসী

মোঃ মোমিনুল ইসলাম
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশার ভনভনানিতে দিনে ও রাতে কোনো শান্তি নেই। অনেক বাসায় দিনের বেলাতেও ঘুমাতে গেলে মশারি টানাতে হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রব অনেক গুণ বেড়ে যায়। মশার উপদ্রবে কমলমতী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে। মশক নিধনের নগর কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। মশা বৃদ্ধির অন্যতম বিষয় হচ্ছে বর্জ্য। বর্জ্য অপসারণে আধুনিক ব্যবস্থা নেই। নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। বর্জ্য নিয়মিত পরিস্কার করা হলে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে অনেকটা রেহাই পাবেন।

এখন বসন্ত। এরপর গ্রীষ্ম, তারপর বর্ষা। আর এ সময়গুলো ভালো সংবাদের পাশাপাশি নিয়ে আসে কিছু আতঙ্কের খবর। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু হচ্ছে এই আতঙ্কের নাম। একটু গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশায় ভরে গেছে গোটা নারায়ণগঞ্জ। এত দিন আমরা জেনে এসেছি মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জাতীয় রোগ হয়। ঈদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়া। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু প্রায় মহামারি আকার ধারণ করেছে রাজধানী ঢাকা সহ নারায়ণগঞ্জে। এর সঙ্গে ২০১৭ সালে যুক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়া। একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, সারা দেশে ১২ লক্ষাধিক মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের শহর-বন্দর সর্বত্র জনজীবন মশার উপদ্রবে বিপর্যস্ত। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই মশার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার কোমলমতি ছাত্রছাত্রী ও গর্ভবতী মায়েরা। মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিস্ক অপরিপক্ক থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অথচ সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

নারায়ণগঞ্জ একটি ঘনবসতির জেলা। আর চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু হচ্ছে ভাইরাসবাহী রোড। এডিস মশা এই ভাইরাস বহন করে একজন থেকে আরেকজনকে কামড়িয়ে এই রোগ ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র। কাজেই প্রতিরোধ্যবস্থা গড়ে না তুললে এ রোগ দুটি এখানে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে অতি সহজেই। আর এ রোগ দুটি নির্মূল করতে হলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ১. যেহেতু আপাতত ঢাকা শহর থেকে রোগটি ছড়াচ্ছে, সেহেতু নারায়ণগঞ্জের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন উভয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে সমাঝোতার ভিত্তিতে। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। চিকিৎসকরাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাঁরাই সিটি কর্পোরেশনকে সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। পাড়ায়, মহল্লায় ও ওয়ার্ড গুলোতে প্রতিনিয়ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। ২. সিটি কর্পোরেশন একটি আইনগত ভিত্তি দিয়ে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ বা টাস্কফোর্স গঠন করতে পারে, যাদের জন্য পৃথক বরাদ্দ দিতে হবে। জনস্বাস্থ্য বলে কথা। বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে, মানসিক ক্ষতির শিকার, লাখ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। ৩. সর্বব্যাপী প্রচার চালাতে হবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। যেকোনো মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করতে এটা হবে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ৪. ঈদানীং ছাদে বাগান করা উৎসাহিত করা হচ্ছে। মশাবাহিত রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে এই ছাদের বাগান। এ ব্যাপারে মানুষকে ভালোভাবে সতর্ক করতে হবে, যাতে ছাদে কোথাও পরিস্কার পানি জমে না থাকে।

ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এই মশার কামড়ে প্রতিবছর জীবন যায় হাজার মানুষের। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র-অসচ্ছল মানুষের চিকিৎসাসেবা নেওয়ার আগেই যেতে হয় পরপারে।

শীত শেষে আবহাওয়া একটু উষ্ণ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে মশার উপদ্রব বেড়ে গছে। কারণ ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে মশার স্বাভাবিক প্রজননের সময় এই সময় কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তার করে।

নগর সংশ্লিষ্টরা জানান, নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া, চাঁনমারী, মাউরাপট্টি, খানপুর, সবুজবাগ, শিবুমার্কেট, দেওভোগ, বাবুরাইল, কিল্লারপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সানারপাড়, ইসদাইর, মাসদাইর এলাকাগুলোতে মশার উৎপাত সবচেয়ে বেশি। মশার প্রজননস্থল খাল, ডোবা-নালাতে ওষুধ ছিটানো হয় না বলেই এসব এলাকায় মশা বেশি। অনেক স্থানে ছোট ছোট কৃত্রিম জলাশয় রয়েছে। এসকল কৃত্রিম জলাশয়ে কচুরিপানা আর ময়লা পচেঁ মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আবার খালগুলোতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব স্থানে পচাঁ পানিত মশা আর শা। আবার সিটি কর্পোরেশনের ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। বেশ কিছু যন্ত্র পুরনো হয়ে এখন কাজ করছেনা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করছেন দেশের মানুষ। কয়েল, এরোসল স্প্রেসহ মশানিধনের নানা উপকরণ কিনতে গিয়ে তাঁদের এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আর মশা মারতে সিটি কর্পোরেশনগুলো প্রতিবছর ব্যয় করছে কোটি টাকা। তবু মশার হাত থেকে রেহাই নেই কারো।