সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত
অসর্তকতা অসচেতনতা থেকেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। যেমনটা বলাচলে চলতি ও গত বছরের কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই দূর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। মানুষের একটু অসাবধানতার কারণেই ছড়িয়ে পরে আতঙ্ক, চোখের সামনে আগুনে পুড়ে মরে মানুষ।
গত কয়েকমাসে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি জায়গায় মানুষের একটু ভুলের জন্য অনেক বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় আহত হয়েছে মানুষ আবার কেউ হয়েছে নিহত। এছাড়াও লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কবলে পরতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। জেলায় ঘটে যাওয়া এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে সচেতন মহলের মতে, প্রতিরোধ নয় প্রয়োজন প্রতিকার।
গত ১৬ জুন নগরীর চাষাড়ার সমবায় মার্কেটের পঞ্চম তলার সিড়ির পাশে থাকা ময়লার স্তুপে কেউ একজন জলন্ত সিগারেট ফেলার কারণেই মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরে আগুন। এসময় পুরো মার্কেটে ভয়াবহ আতঙ্ক বিরাজ করেছে, যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টায় অবশেষে আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে।
চলতি মাসের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার দক্ষিণ বাজার এলাকার সামিয়া টেক্সটাইল মিলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কারখানার প্রায় ২৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে মিল কৃর্তপক্ষ। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।
চলতি বছরের ১৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠেরপুল এলাকায় গ্যাসের পাইপ লিকেজ করে ভয়াবহ
অগ্নিকান্ডে ঘটনায় ৮টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যেখানে গ্যাসের পাইপ লিকেজ ছিলো সেখানে কেউ সিগারেট ফেলার কারণে ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে ওই সময় ফায়ার সার্ভিস জানায়। এ ঘটনায় চায়ের, জুতার ও ফলের দোকানে থাকা বিভিন্ন মাল পুড়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছিলো বলে এলাকাবাসি ধারণা করে।
২ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার নন্দলালপুর এশিয়ার মবিল প্যাকেটজাতকরণ নামের একটি গুদাম ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়ে যায়। জানা যায়, গুদাম ঘরের পাশে থাকা একটি স্টিল মিলে কাজ চলার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ উড়ে এসে মবিলের ওপর পরার ফলেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আর সেখান থেকেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পরে।
২১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার সংলগ্ন বস্তিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫০টিরও বেশি ঘর সেই সাথে একটি ঝুটের গোডাউন পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের সর্বাতœক প্রচেষ্টায় অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার উৎসটি সিগারেট কিংবা কয়েল থেকেই হয়েছিলো বলে ওইসময় জানা যায়।
গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ফতুল্লার হকবাজার এলাকায় চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় মধ্যরাতে মশার কয়েল থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের ৯জন দগ্ধ হয়। গুরুতর অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
একই দিন সদর উপজেলার কুতুবপুর দেলপাড়া পেয়ারাবাগান এলাকায় তিনটি তুলার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। মন্ডলপাড়া ও হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিটের দেড় ঘন্টার যৌথ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে ওইসময় কর্মরত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানায়।
১২ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার পোষ্ট অফিস এলাকায় একটি টায়ার তৈরির কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এতগুলো ইউনিট কাজ করার পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। পাশ্ববর্তী একটি কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ওইসময় জানা যায়।
চলতি ও গত বছরে ঘটে যাওয়া সবগুলো অগ্নিকান্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করে বলা যায়, যেখানে সেখানে সিগারেট না ফেলা, রাতে ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট স্থানে মশার কয়েল রাখা, নিজ দায়িত্বে গ্যাসের পাইপে লিকেজ আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা ও শর্ট সার্কিটের কারণে কেনো আগুন ধরে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হলেই আগুন থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। মানুষের একটু সচেতনতা আর সাবধানতাই পারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড রোধ করতে সেই সাথে তাজা প্রাণগুলোকে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে।
একটি জরিপে দেখা গেছে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যে অগ্নিকান্ড ঘটেছে তার বেশির ভাগ জায়গাতে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে হয়েছে।