নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ১০টি অধিকার ভিত্তিক নাগরিক সংগঠন আসন্ন বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে ( কপ ২৩) বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের স্বচ্ছ এবং সমন্বিত ভূমিকার দাবি জানিয়েছেন। তারা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য সহজলভ্য করতে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা রাখার সুপারিশ করেন। পারিস জলবায়ু চুক্তি ন্যায্যতা এবং দায়িত্বের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সোচ্চার ভূমিকা রাখার স্বার্থে জলবায়ু সম্মেলনে সরকার এবং সুশীল সমাজের ঐকবদ্ধ্য অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে সেমিনারে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
গতকাল সোমবার ‘নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা: প্রেক্ষিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাপা, বিপনেটসিসিিিবডি, বিসিজেএফ, সিএসআরএল, সিপিডি, সিপিআরডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএএস, আইসিসিসিএিডি, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইক্যুইটিবিডি।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী, এতে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একই সংস্থার সৈয়দ আমিনুল হক। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং জলবায়ু আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারী প্রতিনিধি দলের সমন্বয়কারী ড. কাজী খলিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এমপি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিজের ড. আতিক রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান, ফেডারেশন অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্ট ইন বাংলাদেশ-এর কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বৃটিশ কাউন্সিলের তানভীর মাহমুদ, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুডের প্রদীপ কুমার রায়।
সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যাপক সংকট মোকাবেলা করলেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ধনী দেশগুলো বা বিভিন্ন বহুপাক্ষিক উৎসগুলো থেকে যথাযথ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচ্ছে না, যার প্রতিশ্রুতি তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সম্মেলনে দিয়েছিল। তিনি চারটি দাবি তুলে ধরেন, ১) বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে ধনী দেশগুলোর কার্বন উদগীরণ কমানোর লক্ষ্য বাড়াতে হবে, ২) সহ-অর্থায়নের মতো শর্ত তুলে দিয়ে অতি বিপন্ন দেশগুলোর জন্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড সহজলভ্য করতে হবে, ৩) ‘অভিযোজনের বৈশ্বিক লক্ষ্য’ বদলে চুক্তিতে অভিযোজনের দেশীয় লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, ৩) লস এন্ড ডেমেজ আলোচনার ক্ষেত্রে জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির বিষয়টি আনতে হবে।
ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, নিজেদের অর্থায়ন নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড তাদের নিয়ম নীতিতে পরিবর্তন আনছে, যা অতি বিপন্ন দেশগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করছে। এখন এই তহবিল থেকে অর্থ পাওয়া খুব জটিল, আমাদেরকে এই বিষয়ে কপ ২৩-তে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি জোরালো অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশের উচিৎ।
ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হয়েও আমরা এর ফলে অতি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। ঈড়সসড়হ ইঁঃ উরভভবৎবহঃরধঃব জবংঢ়ড়হংরনরষরঃু অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে প্যারিস চুক্তি একটি দুর্বল চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জলবায়ু আলোচনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে আমাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, যদি সব দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করলেও বিশ্বের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়বে। কিন্তু আমরা ধনী দেশগুলোর সন্দেহজনক কার্যক্রম এবং প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা দেখে হতাশ। তাই এই বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালনে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।