আজ শুক্রবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জমে উঠেছে বাণিজ্য মেলা ,দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

এম.এ মোমেন:

জমে উঠেছে ঢাকা আন্তার্জাতিক বাণিজ্য মেলা। সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিন গত ৭ জানুয়ারি শুক্রবার দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই দর্শনার্থীরা সারি সারি প্রবেশ করতে থাকে মেলা প্রাঙ্গনে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশের চাপ ছিল গেইটে।

অবশেষে মেলায় দর্শনার্থীদের সমাগমে বিক্রেতাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। কেটে গেছে তাদের শঙ্কা। সকল সন্দেহ কেটে গিয়ে প্রাণ ফিরেছে বাণিজ্য মেলার। দেশী বিদেশি পণ্যের প্রচার, প্রসার ও বিক্রিতে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে এবারের বাণিজ্য মেলা। শুক্রবারের আগেই স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ শেষ করেই পণ্য ও স্টলে সাজ সজ্জায় পরিপূর্ণতা আসে মেলার। করোনার কারণে এক বছর বিরতি দিয়ে এবার বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টারে স্থায়ী ঠিকানায় মেলার আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলার টিকিট কাউন্টারে ভিড়। প্রবশে গেইটেও ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ধাক্কাধাক্কি করেই অনেকেই মেলা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করছেন। মানুষের চাপে বাচ্চাদের নিয়ে মেলার গেইটে প্রবেশ করতে হিমশিম খেয়েছেন অভিভাবকরা। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করেননি। তবে মেলা কর্র্তৃপক্ষ হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করিয়েছেন। মেলার গেইটে ঢুকেই কেউ ছবি তুলছেন। কেউবা মোবাইল ভিডিও লাইভে স্বজনদের দেখাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গনের দৃশ্য।
গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরেই মেলায় আসার পরিকল্পনা ছিল তাদের। শুক্রবার মেলা আশপাশে মানুষ ও গাড়ির চাপে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েন দর্শনার্থীরা। দেড় ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগের পর মেলায় প্রবেশ করে সুখের নিশ্বাস ফেলেন বলে আরিফুল ইসলাম জানান।
গত ১ জানুয়ারি উদ্বোধনের দিন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করে। এটাই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রি। ছোট প্রতিষ্ঠানের স্টল দেওয়া মালিকদের দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও বেড়েছে প্রচুর। তাতে লাভের আশা করা যাচ্ছে। স্টলে বিক্রি ও পণ্য উপস্থাপন কার্যক্রম পুরো দমে চালু হয়ে গেছে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বিকেল তিনটার পর মেলায় ভিড় করে। আজ ৮ জানুয়ারি শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফার্নিচার এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর স্টলগুলো ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। খাদ্য সামগ্রীর স্টলগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। সেভয় আইসক্রীম বিক্রয় প্রতিনিধি নারীরা ঠান্ডার মধ্যেও নেচে গেয়ে আইসক্রীম বিক্রি করছেন প্রচুর।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে স্বপরিবারে আসা রিমন মিয়া বলেন, প্রথমবারের মতো তিনি ছেলে মেয়েদের নিয়ে শুক্রবার মেলায় এসেছেন। তিন’শ ফিট সড়কের জলসিঁড়ি নামক বাস স্টেশন থেকেই মেলায় আগতদের যানজট। তাতে মেলার দর্শনার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বিশ্ব বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী ছাবিকুন্নাহার বলেন, দুরত্বটা তাদের জন্য ভোগান্তির। কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রীজ পর্যন্ত সড়ক নতুন আঙ্গিকে খুলে দেওয়ায় মেলায় এসেছি।

গাজী গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার এবিএম এনায়েত উল্লাহ সরকার বলেন, গ্যাসের চুলা, গিজার, প্রেসার কুকার, শিশুদের খেলনা প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। তবে দামি পণ্যগুলো এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
আরএফএল কোম্পানির প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, মেলায় ক্রেতাদের আগমনের বার্তা পেয়েছি। মেলার ৭দিনের মধ্যে গতকাল শুক্রবার পণ্য দেদারছে বিক্রি হয়েছে। বাণিজ্য মেলা দিন দিন জমে উঠছে।

আখতার ফার্নিচারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ দুলাল বলেন, ফার্নিচার বিক্রির পরিমাণ আশানরূপ না হলেও কোম্পানির প্রচারে মেলার বিকল্প নেই। তবে অনেকেই নিজ নিজ এলাকার ফার্নিচারের শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন।

ওয়ালটন কোম্পানির প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ সাব্বির আহমেদ বলেন, স্টলে উৎপাদিত দামি পণ্যগুলো বিক্রি না হলেও কমদামি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। তবে দাবি পণ্যগুলো দর্শনার্থীরা দেখছেন।

যমুনা ইলেকট্রনিকের ব্যবস্থাপক মোঃ আবু রায়হান বলেন, আগের বাণিজ্য মেলায় মানুষের ঢল নেমে আসতো। এখানে সেটা নেই। তবে আজ শুক্রবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমন ছিল উল্লেখযোগ্য।

গোল্ডেল ইনফিনিটি ইলেকট্রিক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার মাহবুবুল আলম বলেন, শুক্রবারের বিক্রিতে স্টল মালিকরা খুশি। গত কয়েকদিনের তুলনায় বিক্রিও হয়েছে প্রচুর।
কাশ্মীরি শাল ক্রেতা ডেমরার সাবিহা সুলতানা বলেন, নিয়মিত মার্কেটের চেয়ে কম দামেই তিনি বাণিজ্য মেলা থেকে শাল ক্রয় করেছেন। নতুন স্থানে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় এসে প্রাকৃতিক ও গ্রামীণ পরিবেশে এসে তিনি অন্যরকম অনুভুতি অনুভব করেছেন বলে জানান।

মেলার টিকিটের সাব ইজারাদার আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ও রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, গত ৭ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেছেন। এটাই এবারের মেলায় একদিনে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রি। তবে তখনও ধীরে ধীরে মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করছিল।

বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেষার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দর্শনার্থীদের আগমনে মেলার আয়োজন সার্থক হয়েছে। সকল জল্পনা কল্পনা শেষে বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুঁটতে শুরু করেছে।