আজ শনিবার, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছুটির দিনে আমেজ

এম.এ মোমেন

মেলার চতুর্থ ছুটির দিনে গতকাল ১৪ জানুয়ারি শনিবার উৎসাহ উদ্দীপনার আমেজ পরিলক্ষিত হয়েছে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে। বেলা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমন বেড়ে যায়। দুপুরের পর মেলায় মানুষের স্রোত নেমে আসে। কার আগে কে মেলায় প্রবেশ করবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে দর্শনার্থীরা। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে স্টলের দায়িত্বরত কর্মী ও মেলায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা হিমশিম খেয়ে উঠে। স্টল ও প্যাভিলিয়নে লক্ষ্য করা যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বিকেল ৫টায় বাণিজ্য মেলায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। দর্শনার্থীর সমাগমে বিক্রেতা, মেলার আয়োজক ও প্রবেশ টিকিটের ইজারাদার খুশি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মেলার চতুর্থ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় মানুষের ঢল নামে। নারী ও শিশুদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। কেউ কেউ অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করে রাখেন। কেউবা মাসিক কিংবা সিজনাল টিকিট ক্রয় করেন। স্পেশাল ও ভিআইপি টিকিটেও দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করেন। বিকেল ৫ টায় মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নে উপচে পড়া ভিড় জমে। পণ্য বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। ভালো মানের পণ্য পেয়ে ক্রেতারা খুশি। তাতে লাভবান হয়ে বিক্রেতারাও আনন্দিত
তরুণীদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় এসেছেন। পছন্দের জিনিস কিনেছেন তাঁরা। মেলায় শিশুদের জন্য রয়েছে নজরকারা ডিজাইনের পোশাক, জুতা ও খেলনা। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও দল বেঁধে মেলায় আসেন। নানা শ্রেণির ও নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গন।
মেলায় প্রবেশ টিকিটের ইজারাদার ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ ছালাউদ্দিন ভ্ইুঁয়া বলেন, গত ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মেলাার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দিন বিকালে টিকিট কেটে ৩ হাজার ২১৭ জন দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছেন। ২ জানুয়ারি ৭ হাজার ৪৮১ জন, ৩ জানুয়ারি ৯ হাজার ৭১২ জন, ৪ জানুয়ারি ১০ হাজার ২৬ জন, ৫ জানুয়ারি ১৫ হাজার জন, ৬ জানুয়ারি ৬৫ হাজার জন, ৭ জানুয়ারি ৫৭ হাজার ৮৬৯ জন, ৮ জানুয়ারি ১৬ হাজার ৭৩২ জন, ৯ জানুয়ারি ১৭ হাজার ৮৭২জন, ১০ জানুয়ারি ২১ হাজার ৩২৪ জন, ১১ জানুয়ারি ২২ হাজার ৭১০ জন, ১২ জানুয়ারি ১৯ হাজার ১২৯ জন, ১৩ জানুয়ারি ৯০ হাজার ৮৪৩ জন ও ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৯৮৫জন ক্রেতা ও দর্শনার্থী টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেছেন। এছাড়া অনলাইন, সিজনাল মাসিক টিকিট, স্পেশাল ও ভিআইপি টিকিট কেটে আরো অন্তত ১০ হাজার জন দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছেন। তবে প্রতাশ্যা অনুযায়ী টিকিট এখনও বিক্রি হয়নি। নানা প্রতিকূলতায় মেলার আয়োজকদের উৎসাহ উদ্দীপনা কমছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকটে পড়বেন।
রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মশিউর রহমান তারেক বলেন, ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও ভিড় এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তিন শতাধিক নেতাকর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়মনীতি, নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও তারা কাজ করবে।
ঢাকার ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাহিয়া জাহান এশা স্বপরিবারে মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, শিশু মেলা ও বিদেশিদের বাতিঘর স্টল দর্শক নন্দিত হয়েছে। মেলার পরিসর গতবারের চেয়ে ভালো হওয়ায় দর্শনার্থীদের আগমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কসমেটিকস, ইমিটেশনের গহনা, শালসহ পণ্যের দাম বেশি। তবে মান সম্মত হওয়ায় ক্রয় করেছি। মেলায় এসে ভালো লাগছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে স্বপরিবারে আসা গৃহবধূ আয়েশা বেগম বলেন, এক ঘণ্টার পথ যানজটের কারণে চার ঘণ্টায় মেলায় এসেছি। যানজটে পড়ে গাড়িতেই মেলার আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। ছেলে মেয়েরা ক্লান্ত হয়ে মেলায় প্রবেশ করেছে। যানজট নিরসন করতে না পারলে মেলার ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
ডিজাইন বাই রুবিনা’র ডিজাইনার ও প্রোপাইটর রুবিনা আক্তার মুন্নি বলেন, বাণিজ্য মেলা এখন জমজমাট। নিজেদের ডিজাইন ও তৈরিকৃত চামড়া ও পাটের পণ্য মেলায় বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেও ক্রেতা দর্শনার্থীরা এতদিন কম আসলেও শুক্রবার ও শনিবার মেলা জমে উঠেছে।
নারী উদ্যোক্তা উত্তরণ নারী উন্নয়ন সমিতির সভানেত্রী নাজনিন আক্তার মুক্তা বলেন, তাদের স্টলে থ্রি-পিস, ওয়ান-পিস, বেডশিট বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। ক্রেতা দর্শনার্থীদের স্টলে ভিড় লেগেই থাকে। যানজট নিরসন করতে পারলেই মেলার পূর্ণ সফলতা আসবে বলে তিনি মনে করেন।
জয়িতা স্টলের নির্বাহী পরিচালক আইরিন পারভিন বলেন, এবারের মেলার আয়োজন ভালো। স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা বেশি। শুক্র ও শনিবার দুপুরের পর থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মেলাপ্রাঙ্গণ।
মহিলা উদ্যোক্তা জয়িতা স্টলের মালিক ও দৌলতপুর দুঃস্থ মহিলা সমিতির সভাপতি রিজিয়া সুলতানা বলেন, মেলার আইনশৃঙ্খলা, নিয়মনীতি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আছে। তবে মেলার আশপাশের এলাকার ধুলাবালুতে প্রতিনিয়ত পানি দেওয়া প্রয়োজন।
মহিলা উদ্যোক্তা জয়িতা স্টলের মালিক ও শাহনাজ হস্তশিল্পের প্রোপাইটর শাহনাজ পারভিন বলেন, মেলায় হাতের তৈরি ব্যাগ, হ্যান্ডব্যাগ, নকশিকাঁথার চাহিদা বেশি। নারী ক্রেতারা স্টলে এসে কোন না কোন পণ্য না কিনে কেউ খালি হাতে ফিরছেন না। বহু জল্পনা কল্পনার পর বাণিজ্য মেলা এখন জমে উঠেছে। ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। পণ্য বিক্রি ভালো হওয়ায় আমরা লাভের আশা করছি।
আলয় এ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার শো-রুম ইনচার্জ মোঃ সাফিন পাটোয়ারী বলেন, এবার যখনই মেলা জমজমাট হয়ে উঠবে, ঠিক তখনই একটা না একটা প্রতিকূলতা নেমে আসে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় শনিবার মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়েছে। কাঙ্খিত দর্শনার্থীদের আগমনে সবাই খুশি। এবার বাণিজ্য মেলা ব্যবসা সফল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ সংবাদ