সংবাদচর্চা রিপোর্ট: সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জে ৫ টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলা জেলা নির্বাচনে অংশ নিতে জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ১টিতে একক, ১ টিতে ৩ জন এবং ২ টিতে সর্বোচ্চ ৪ জন করে সর্বমোট ১২ জন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত করেছে ক্ষমতাসীন দল নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ।
আর মামলা জটিলতার কারনে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় আপাদত স্থগিত রাখা রয়েছে সেটির চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারন কার্যক্রম।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সম্ভাব্য চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য জেলার ৪টি উপজেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূলের সাথে বর্ধিত সভা করে মতামতের ভিত্তিতেই প্রত্যেকটি উপজেলায় একক থেকে সর্বোচ্চ চার জন করে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করেছে জেলা আওয়ামীলীগ।
তবে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা অনুযায়ী গত রবিবার ৩ ফ্রেব্রæয়ারীর মধ্যেই জেলার ৪টি উপজেলার তৃণমূলের মনোনীত নৌকা প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রস্তুতকৃত এই নামের তালিকা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডে পৌঁছে দেয়ার সময়সূচি থাকলেও আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে তাদের মনোনীত নৌকার মাঝির নামের তালিকা এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত হস্তগত না হওয়ায় যথাসময়ের মধ্যে কেন্দ্রে তালিকা প্রেরণ সম্ভব হয়নি বলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সুত্রে জানা গেছে।
জেলা আওয়ামীলীগের একটি সুত্র জানান ‘আগামী মার্চে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার চারটি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে
আড়াইহাজারে একক, বন্দরে তিন, রূপগঞ্জে চার এবং সোনারগাঁয়ে চার জন নৌকার মাঝি মনোনীত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক গত রবিবার ৩ ফেব্রুয়ারীর মধ্যেই প্রার্থীদের যাবতীয় কাগজপত্রসহ নামের তালিকা চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য আওয়ামীলীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে তাদের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর তালিকা হস্তগত না হওয়ায় এদিন আর কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে আজ সোমবার কেন্দ্রে তালিকা পৌঁছে দেয়া হবে।’
সুত্রটি আরও জানান, ‘মামলা জটিলতার কারনে সদর উপজেলা পরিষদের ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় শুধুমাত্র এই একটি উপজেলার সম্ভাব্য নৌকা প্রত্যাশীদের তালিকা প্রস্তুত স্থগিত রাখা হয়েছে। যদি পরবর্তীতে এই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে তখন দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক একক বা সর্বোচ্চ তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করে তাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে।’
তৃণমূল আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন-
রূপগঞ্জ উপজেলা: রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা,রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাবিবুল কাদির তমাল ,মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের ভিপি শাহরিয়ার আলম পান্না সোহেল।
সোনারগাঁ উপজেলা: সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. শামছুল ইসলাম ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন এবং জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এফবিসিসিআই পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন।
বন্দর উপজেলা: বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।
আর একমাত্র আড়াইহাজার উপজেলাতেই তৃণমূল আওয়ামীলীগের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ শাহজালাল মিয়াকে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
গত ২ ফেব্রæয়ারী আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় একক প্রার্থী হিসেবে শাহজালাল মিয়াকেই পুনরায় সমর্থণ জানায় তৃণমূল আওয়ামীলীগ।
প্রার্থীতার সত্যতা স্বীকার করে আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘২ ফেব্রæয়ারী উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দরা সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে একক ভাবে মনোনীত করেছেন। আর এই তালিকা রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি বিধায় গতকাল কেন্দ্রে তালিকা পাঠাতে পারেনি।’
এরআগে, আগামী মার্চে পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে চার নির্দেশনা দিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি-সাধারন সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, “আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী দলটির জেলা ও উপজেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের (৪ জন) স্বাক্ষরে প্রত্যেকটি পদের জন্য ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা করে একক বা সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠাতে হবে। এরপর জেলা আওয়ামীলীগকে ৩ ফেব্রæয়ারীর মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার সব উপজেলার প্রার্থীর তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকযোগে বা সরাসরি কোনো মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডে পাঠাতে হবে।”
আওয়ামীলীগ সেক্রেটারীর ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছিল, “কেন্দ্রে প্রেরিত তালিকার সাথে মনোনীত প্রার্থীদের নাম, ভোটার নং (১২ ডিজিট), এবং নির্বাচনী আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের সকল তথ্য সঙ্গে পাঠাতে হবে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত প্রার্থীর নাম ও প্রতীক বরাদ্দ করবে ইসি। আর তাদেরকে অবশ্যই আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন কিনতে হবে।”
এরপর গত ৩০ জানুয়ারী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন সংক্রান্ত অরেকটি বিবৃতি দেন।
আওয়ামীলীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উপজেলা নির্বাচনে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদে দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। আর উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ। ফলে এই দু’টি পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না আওয়ামীলীগ।”
পাঁচ ধাপে সারাদেশে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৪টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় মামলার কারনে এবারও স্থগিত রাখা হয়েছে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৮০টি উপজেলা পরিষদে ৫ ধাপে ভোট করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
কিন্তু এবার বিভিন্ন জটিলতার কারণে ১২টি উপজেলা পরিষদে হচ্ছে না ভোট। যার মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদও।
ইসি সূত্র মতে, মেয়াদ অনুসারে উপজেলা পরিষদগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন ৪টি উপজেলায় চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তন্মধ্যে, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৩টি উপজেলায় এবং পঞ্চম বা শেষ ধাপে ১টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে।
আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের জন্য বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২৪টি জেলার ১৫৯টি উপজেলাকে চিহ্নিত করেছে ইসি। এরমধ্যে রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলা।
আর রমজানের পর পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের জন্য চিহ্নিত ১৭টি উপজেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে ইসির সিদ্ধান্তে ভোটের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।