আজ বৃহস্পতিবার, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গ্রুপিংয়ে নাজেহাল ফতুল্লা বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার :

গ্রুপিংয়ে নাজেহাল ফতুল্লা থানা বিএনপি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোন্দলে বিব্রত কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের একাংশ। আরেক অংশ আবার এই বিভাজনের পালে নিয়মিত হাওয়া দিয়ে যাচ্ছেন। কমিটির মধ্যে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন নয়া কমিটি! ওই পক্ষটিই এখন থানা বিএনপির সর্বে সর্বা হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুকে বশে এনে ছড়ি ঘুড়ানোর পাশাপাশি জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন অনুসারী হিসেবে পরিচিত থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়াকে মাইনাস ফর্মূলায় রেখেছে কমিটিতে থাকা মাস্টার মাইন্ড খ্যাত এক নেতা। ওই নেতা যেদিকে ইশারা করছেন, সেদিকেই পা বাড়াচ্ছে শহিদুল ইসলাম টিটু। এতে দলের একাংশের নেতারাও ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে পরেছেন। দলের পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। শীর্ষ দুই নেতার এই কোন্দল কোন পথে নিয়ে যায় ফতুল্লা থানা বিএনপিকে- তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
সূত্রে জানা গেছে, শহিদুল ইসলাম টিটু ও বারী ভূইয়ার মাঝে সম্পর্কের ফাটল ধরেছিল থানা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে। কয়েকটি পদে টিটু যাদেরকে পদস্থ করতে চেয়েছেন, সেখানে দ্বিমত ছিলো বারী ভূইয়ার। একই ভাবে বারী ভূইয়া যাদের পদস্থ করতে চেয়েছেন, তাদের বিষয়ে দ্বিমত পোষন করেছিলেন শহিদুল ইসলাম টিটু।
একপর্যায়ে জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার মধ্যস্থতায় এর সমাধান হলেও তাদের অর্ন্তদ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে তারা একত্রে দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও ভিতরে ভিতরে নানা বিষয়ে দ্বিমত ছিলো দুজনেরই। এরাই মাঝে গত রমজানে পৃথক ভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন তারা দুজন। এর মাধ্যমে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব একেবারেই পরিস্কার হয়ে উঠেছিল। সেই দ্বন্দ্বে ঐক্যের প্রলেপ পড়েনি আজও।
সবশেষ গত ১৬ই মে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত একটি কনভেনশন হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি মূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়াকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। ছিলেন না বারী ভূইয়া তথা গিয়াস উদ্দিন অনুসারী অন্যান্য নেতাকর্মীরাও। থানা বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত সভায় সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতাদের অংশগ্রহণ না থাকার কারণ নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে- তখন এর উত্তর দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক বারী ভূইয়া নিজেই।
গতকাল রাতে দৈনিক সংবাদচর্চাকে বারী ভূইয়া বলেন, ‘আমাকে প্রোগ্রামের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আমি কিছুই জানি না। তারা তাদের মত করে আয়োজন করেছে। আসলে আমাকে মাইনাস করার চেষ্টা করছে কিনা- তা আমার জানা নেই। তবে মাইনাস করা হলেও আমার আপত্তি নেই। বিএনপির একজন ভোটার হিসেবে তো ধানের শীষে ভোট দিতে পারবো! এতেই আমার চলবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বারী ভূইয়া বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আমরা রাজপথে বের হতে পারি না। পুলিশি বাধার সম্মূখিন হই। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা চোখ রাঙায়। কিন্তু তারা থানার সামনে মিটিং মিছিল করলেও কোনো বাধা আসে না। এতেই প্রতীয়মান হয় যে, তারা লিয়াজু করে রাজনীতি করে। তাদের কোনো সমস্যা হয় না। নারায়ণগঞ্জে গিয়াস ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করা এক এবং তার বাহিরে রাজনীতি করা লোকেরা আরেক। এটাই এখন মূল কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এদিকে, কমিটির শীর্ষ দুই নেতার মাঝে এমন বিরোধপূর্ন অবস্থান, গ্রুপিং এবং একপেশে কর্মসূচির কারণে বিপত্তিতে পড়েছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। গ্রুপিং এড়াতে গিয়ে অনেকেই ভুগছেন দোটানায়। এক দিকের কর্মসূচিতে গেলে আরেক দিকের বিরাগভাজন হওয়ার শঙ্কায়ও ভুগছেন কেউ কেউ। এর মাঝে থানা বিএনপির সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে গত রমজানের ইফতার পার্টি এবং গত ১৬ই মে’র প্রস্তুতি সভায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক সংবাদচর্চাকে হাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো গ্রুপিংয়ে নেই। আমাদের গ্রুপ হলো বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। কোনো গ্রুপিংয়ে কখনই জড়াইনি আর জড়াবোও না। নেতায় নেতায় গ্রুপিং দেখা যায়। এতে অনেকেই বিব্রত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফতুল্লা থানা বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক ভাবে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছি আমরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একের পর এক মামলা হলো। বহু প্রচেষ্টার পর সম্প্রতি কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়েছি। আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সাহেব এখন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই। এর মধ্যেও থানা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সভাপতি এবং সেক্রেটারি পৃথক ভাবে কর্মসূচি পালন করে। আবার সভাপতি কর্মসূচি ডেকে সাধারণ সম্পাদককে জানায় না। এতে দলের দায়িত্বশীল একজন নেতা হিসেবে আমরা বিব্রত। সভাপতি এবং সেক্রেটারির মাঝে বৈরীতা স্পষ্ট হওয়ায় এই কমিটির ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে- তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
এই বিষয়ে জানতে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।