সংবাদচর্চা রিপোর্ট
দেশে থাকলে মামলার হাজিরা আর রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে। গ্রেপ্তার হয়ে বহুবার কারাগারেও যেতে হয়েছে তাকে। জেলের জীবন যে সুখের নয় তা তিনি অনেকবার বলেছেন। সম্প্রতি আমেরিকায় গিয়েছেন এ রাজনীতিক। তবে সেখানেও তাকে বন্দি থাকতে হচ্ছে। ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস ও এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানিয়েছেন তিনি। তবে এবার তিনি একা নন, বন্দী তার স্ত্রীও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে এটিএম কামাল বলেছেন, এইতো কয়েকটা দিন মাত্র, ছিলাম মাতৃভূমি বাংলাদেশে, এখন সাত সমুদ্র আর কত নদী পার হয়ে কেয়াকে নিয়ে চলে এসেছি আমেরিকায়, বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারির রূপ নিয়েছে, ম্যারিল্যান্ডের অবস্থা ভালো নয়, চারিদিক থেকেই দুঃসংবাদ আসছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। কেয়ার শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা, দেহ ঘড়িটা আমাদের দূজনেরই ভালো নেই। রাত দিনের পার্থক্যের সমস্যাটাও এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখানে স্কুল, কলেজ. ইউনিভার্সিটি , মসজিদ, মন্দির, গীর্জা সব বন্ধ। জরুরী কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাহির হয়না। আমরাও এক প্রকার সেচ্ছায় গৃহবন্দী হয়েই আছি। কাজ শুধু টিভি দেখা, নামাজ পড়া, খাওয়া, ঘুমানো, নাতিনের সাথে খুনসুটি আর বাংলাদেশে কথা বলা, এর মাঝে আমার ছেলে বললো একটি নিউজ পোর্টাল ও দুই একটি স্থানীয় পত্রিকা আমার সস্ত্রীক এমেরিকায় আসা নিয়ে নতিদীর্ঘ প্রতিবেদন ছেপেছে। সে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজনীতির নোংরামী নিয়ে কিছু কথা বলল…. আমি তখন জবাব দিইনি, কিছুক্ষন আগে তাকে উদ্দেশ্য করে আমার একটা লেখা পেয়ে গেলাম, প্রাসঙ্গিক মনে হল, তাই দিলাম….. সোহান বাবা আমার, এইতো সেদিনের কথা, আমাকে না পেয়ে তোমাকে যেদিন রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল,তোমার আম্মুর হাহাকারের কথা আজো আমি ভুলিনি,ফোন করে তোমার আম্মু বললো, বাসার দরজা ভেঙ্গে আমার ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গেল, রাত পোহালেই তার মাষ্টার্স পরীক্ষা, আমি তোমাকে কোনদিন ক্ষমা করবোনা। আমি জানি, ওরা জানে, আমি বাসায় নেই, আমাকে ধরার জন্য সে সময় প্রতি রাতেই দফায় দফায় বাসায় যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছিলো, সেই পরিস্থিতিতে আমার বাসায় থাকার কথাও না, ওরা তোমাকে নিতেই এসেছিল, নিয়ে গেল। তারপরও আমাকে থামাতে পারেনি, আর দলীয় দায়িত্ব থেকে এক চুলও আমাকে নড়াতে পারেনি। ‘৯৬ তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো, তুমি তখন ছোট। গলাচীপায় যুবদল নেতা মজিবরকে বিজয় মিছিল থেকে গুলি করে হত্যা করলো, প্রতিবাদ দূরে থাক শহরে টু শব্দটি নেই, আমি তখন যুবদলের একজন মাঠ কর্মী মাত্র, দলের দায়িত্বশীল নেতা আর যারা এমপি নির্বাচন করেছে তাঁরা প্রতিবাদ দূরের কথা নতুন এমপি শামীম ওসমান জ্বরে আক্রান্ত। আমার নামে তখনো শহর যুবলীগের সহ সভাপতি পান্ডা হত্যা, শ্রমিক লীগের মনির হ্ত্যা সহ প্রায় দুই ডজন মামলা, আমি ডেভিড সহ অনেকে তখন ফেরারি, পদে পদে জীবনের ঝুঁকি, তারপরেও চুপ করে থাকিনি, মজিবর হত্যার প্রতিবাদে যুবদল ও ছাত্রদলের হাতেগোনা কয়েকজন মিলে শহরে কালো পতাকা মিছিল করলাম। তখনো তৈমুর ভাই বিএনপিতে যোগ দেয়নি, একদিন যুবলীগের এক নেতার নেতৃত্বে বাসায় হামলা হলো, দরজা ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে তোমার আম্মুর বুকে পিস্তল ধরে হুমকি দিল, আমি না থামলে আমাকে মেরে ফেলবে, এর কিছুদিন পরেই ছাত্রদল নেতা অনিককে গুলি করে হত্যা করা হলো, অনিকের জানাজা হলো মিশন পাড়ার মোড়ে, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারা স্বসস্ত্র অবস্হান নিয়েছে চাষঢ়ায়, হানিফ কাকা বললো, মুরুব্বীরা ছাড়া কেউ যাবেনা কবরস্থানে, কিন্ত সবার নিষেধ সত্বেও আমি গিয়েছিলাম, সবাই আতঙ্কগ্রস্থ, বাসায় মরা কান্না, তোমার দাদু , আম্মু , ফুপুুরা মাটিতে গড়িয়ে বিলাপ করছে, এই বুঝি আমার লাশ এলো !!! সেদিন রোমেল জীবনবাজি রেখে কবরস্হান থেকে আমাকে কৌশলে বের করে ঢাকায় না দিয়ে আসলে হয়তো ইতিহাস অন্যরকম হতো, মানুষ সব ভূলে যায়, আমি ভূলিনা !!! আজ অনেকেই অনেক কথা বলে ফেলে, অশ্লীল গালি দিতেও কুন্ঠা করেনা,ওরা ছেলে মানুষ তাই গায়ে মাখিনা কারন আমি জানি, এরা সবাই আমাকে ভালোবাসে তাই এই ক্ষুব্দ প্রতিক্রীয়া, তুমি জান, আমি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তোমার মত তুমি প্রকাশ করেছ, তবে তোমার মতের সাথে আমি একমত নই। আমি জানি অন্যরা যে যাই করুক সেটাতে কিছু যায় আসেনা, আমার সবকিছুতেই সবার প্রখর দৃষ্টি, যে কারনে আমার কাছে এমনকিছু আশা করেনা যেটাতে আমি বিতর্কিত হই। আমি আমার দলের ছোটবড় সকল নেতাকে শ্রদ্ধা করি, তাঁদের নিয় কেউ কোন বিরূপ মন্তব্য করলে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয়। শয়তান ভূল করেনা, মানুষের ভূল হতেই পারে, আমি ভূল ত্রুটির উর্ধে কোন মহামানব নই, সাধারন একজন মানুষ মাত্র।একটি কথা মনে রাখবে সবসময় আজকের এই আমি বিএনপি করি বলেই এত আলোচিত,সমালোচিত ও পরিচিত, এটা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। রাজনীতি করি, ভূলের জন্য আজ যারা জুতার মালা দিবে, ভালো কাজের জন্য কাল তারাই আমাকে ফুলের মালা দিবে। ছোট্ট একটা জীবন, শিশু থেকে কখন বৃদ্ধ হয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। কাউকে ছোট ভাবিনা, নিজেকে বড় মনে করিনা। কিছু পাবার জন্য নয় একজন মানুষ হিসেবে দেশ-দল ও সমাজের জন্য সাধ্য অনুযায়ী করার চেষ্টা করেছি, যতটুকু করেছি তারচেয়েও অনেক বেশী পেয়েছি। সবার ভালবাসার মাঝেই বেঁচে আছি। সবার ভালবাসা নিয়েই চলে যেতে চাই। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের সহায় হউন।,আমিন।(চলবে)
গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে এটিএম কামাল জানান, আমরা বাসায় স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি আছি। এখানে সবাই সচেতন। সবাই আইন মানে। আমি ও আমার স্ত্রী কেয়া দু’জনেই সিনিয়র সিটিজেন। তিনি জানান, আমেরিকার সরকার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে এরপরও এখানকার বিরোধী দল সমালোচনা করছে। তাদের মতে, আরও আগে থেকে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না। এ প্রসঙ্গে এটিএম কামাল বলেন, আমাদের দেশের সরকারও অনেক দেরী করে ফেলেছে।