নিজস্ব প্রতিবেদক:
রানা প্লাজা ধ্বসের ৫ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, দায়ী মালিকসহ সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ন্যূনতম মজুরি ১৮০০০ টাকা নির্ধারণের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট গাবতলী-পুলিশ লাইন শাখার উদ্যোগে মাসদাইর চৌধুরী কমপ্লেক্স এর সামনে মানববন্ধন ও এলাকায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল ৫ টায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কর্তৃক ২৪ এপ্রিলকে গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট গাবতলী-পুলিশ লাইন শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম শরীফের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, বিসিক শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সাইদুর, গাবতলী-পুলিশ লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসনাত কবীর, সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ থেকে ৫ বছর পূর্বে সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসে ১১৩৭ জন শ্রমিক নিহত হয়। আরো ২৫০০ জন আহত হয়। এদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। ৩০০ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছে, যাদের হদিস আজও পাওয়া যায়নি। মালিকের অবহেলায় গার্মেন্টস শিল্পে সারা দুনিয়ায় এতবড় হত্যাযজ্ঞ আর হয়নি। এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ীদের বিচার কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। ভবনের মালিক কারাগারে থাকলেও গার্মেন্টস মালিক ও দায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিহত-আহত শ্রমিকদের সরকারি তহবিল, বায়ার ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দান অনুদান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কোন দান নয় অধিকার। মালিকের সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক করে হলেও নিহত আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ১৮৫৫ সালের Fatal accident Act অনুযায়ী তার Loss of earning বিবেচনা করলে প্রত্যেক শ্রমিক ন্যূনতম ৪৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আর কোনও রানা প্লাজা দূর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মালিকসহ দায়ী সকলকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণে ২৪ এপ্রিল গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করতে হবে। সাভারে যেখানে রানাপ্লাজা ছিল তার সামনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করতে হবে। রানাপ্লাজা ভবনটি সরকারি জায়গায় নির্মিত ছিল, সেখানে শ্রমিক কলোনি নির্মান করতে হবে। জুরাইন কবরস্থানে পরিচয়হীন শ্রমিকদের জন্য একটি স্মৃতিফলক নির্মান করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৮০০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বলেন, মজুরি নির্ধারণের একটা যুক্তিসঙ্গত মানদ- থাকতে হবে। কর্মক্ষম মানুষের কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য যেটুকু ন্যূনতম খাবার প্রয়োজন তার মূল্য, বাড়ি ভাড়া, পোশাক, চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ইত্যাদি ধরলে মাসে ৫ জনের দরিদ্র পরিবারের যে খরচ হয় তা হিসাব করলে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীর মাসিক আয় কোনভাবেই ১৮ হাজার টাকার কম হতে পারে না। মজুরি বোর্ড গঠন হয়েছে। পে-স্কেলে ঘোষিত ন্যূনতম মোট মজুরি, দেশের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র গবেষণা, আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠান অক্সফামের গবেষণা, বিদেশী অন্যান্য গার্মেন্ট উৎপাদনকারী দেশের ন্যূনতম মজুরি ইত্যাদি পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে আমাদের দেশের পোষাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকার কম করার কোন কারণ নেই।