বিশেষ প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরে আসবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন চলছে নাসিক নির্বাচনের হাওয়া। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নাসিক নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জোড় লবিং শুরু করে দিয়েছে। বর্তমান মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী বিরোধীরা মাঠে নেমেছে। তারা আইভীর পরিবর্তে নতুন প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে। নগরীর জলাবদ্ধতা, হিন্দুদের জমি দখল, বিলাশ বহুল বাড়িসহ আইভীর নানা বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার এবং প্রকাশ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদলসহ শামীমপন্থীরা মাঠে নেমেছেন। জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানও তাদেরকে বিভিন্ন সভা থেকে উৎসাহ প্রদান করছে। নাসিকের দুনীর্তির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কবরে শ্বশানের মাটি দেওয়ায় ক্ষুব্দ ওসমানপন্থীরা। এত সব অভিযোগের পরেও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি , মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী নগরীর উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার কর্মীসমর্থকদের মাঠে নামাচ্ছেন । দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করতে যা যা যোগ্যতা থাকা দরকার তা সবই আছে আইভীর। তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন এবারও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হওয়ার জন্য । তারা বায়োডাটা এবং কর্মকান্ড দেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো তাকে এবারও মনোনয়ন দিতে পারেন। তবে শামীম ওসমান ,সেলিম ওসমানদের প্রার্থীরাও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য । তারপরও সবকিছুই ঠিক করবেন দলীয় হাইকমান্ড। নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভীকে যতটা চাপে রাখছেন শামীম ওসমান। সংসদ নির্বাচনেও তা শোধ দেওয়ার চেষ্টা করবেন মেয়র আইভী। নগরীতে তার হেভিওয়েট একাধিক এমপি প্রার্থী সমর্থক রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউছার আহমেদ পলাশ। তিনি নারায়ণগঞ্জ -৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। শামীম ওসমানকে ঠেকানোর জন্য তিনিও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সুত্রের খবর কাউছার আহমেদ পলাশের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে সু সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শামীম ওসমানের ব্যর্থতা গুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসন এবার জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বন্দরে মেয়র আইভীর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। সদর- বন্দরে আওয়ামী লীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য এড. আনিসুর রহমান দীপু, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান । আওয়ামী লীগ আসন না ছাড়লে সদর-বন্দরে সেলিম ওসমান বেকায়দায় থাকবে । আর যদি নাসিক নির্বাচনে তারা দুই ভাই মেয়র আইভীকে চাপে না রাখে তাহলে তাদের মনোনয়নেও আইভীপন্থীরা চাপ সৃষ্টি করবে না।
গত ৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বলেছেন যারা মনে করবেন নৌকা পেলেই পাস ,তারা সড়ে যান। তাহলে কি বিদ্রোহের রাজনীতি নারায়ণগঞ্জ শহরে আবার শুরু হচ্ছে তা নিয়েও চলছে নানা কথা। নাসিকের পর,জেলা পরিষদ ,সংসদ নির্বাচন আসবে । সুত্রের খবর পদ ভাগাভাগির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে , নাসিক নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়র আইভীকে যদি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান চাপে রাখে তাহলে সংসদ নির্বাচনেও তাদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে তারা চাপে থাকবে। সিটিতে আইভীকে ছাড় দিলে সংসদ নির্বাচনে তারাও ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সিটি নির্বাচনে আইভীকে ছাড় না দিলে সংসদ নির্বাচনে আইভীও তাদেরকে সহজে ছাড় দেবে না। তখন মেয়র আইভীর সমর্থকরা সংসদ সদস্য পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবে। তাই কথায় আছে ইট মারলে পাটকেল খাবেন।