নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাত তখন ০১.৩০ মিনিট। ডিবি অফিস থেকে বাহির হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে একটি মেয়ের আর্তনাদের শব্দ। আমার বাবাকে বাঁচান। দৌড়ে গিয়ে দেখি। এক ছিনতাইকারীর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন এক ব্যক্তি। পাশেই দাড়িয়ে অসুস্থ্য মেয়েটি চিৎকার করছেন। আমার এগিয়ে যাওয়ায় রাস্তার রিক্সাওয়ালাগুলো এগিয়ে গেল। রিক্সাওয়ালাদের সহযোগিতায় কুখ্যাত ছিনতাইকারী কুমুদিনীর সিআইডি মাসুমের ভাই খোকন (৪০) কে একটি চাকুসহ গ্রেফতার করি। কন্টোলরুমকে তাৎক্ষনিক বিষয়টি অবহিত করলে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং সহযোগিতায় আহত ভিকটিমকে উদ্ধার করে খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। লোকটি বয়সের তুলনায় খুবই সাহসী এবং শক্তিশালী ছিলেন বিধায় রক্ষা। লোকটির ডান পায়ে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারী। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় লোকটির নাম মোঃ আমান উল্লাহ আমান (৫৩), পিতা আঃ লতিফ, সাং ৩ নং এসআই রোড, নবীগঞ্জ, থানা বন্দর, জেলা নারায়নগঞ্জ। মেয়েটির নাম ফাতেমা জান্নাত লোভা (অর্পি), বয়স ১৮। মেয়েটি অসুস্থ্য থাকায় রাতে বিপদে পরে হাসপাতালে নিয়ে আসছিলেন তার বাবা। রাস্তায় কূমুদিনী মাঠের নিকট পৌঁছা মাত্রই অতর্কিত আক্রমন করে ছিনতাইকারী খোকন। তার পায়ে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে। এভাবেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে ঘটনার বিবরন দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) শহরের কুমুদিনী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিবির এসআই মফিজুলের সাহসিকতায় রক্ষা পায় বাবা ও মেয়ে, ধৃত হয় কুখ্যাত ছিনতাইকারী।
যেকোন দুঃসময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা। পুলিশ আছে বলেই রাতে সাধারন মানুষ শান্তিতে চলাফেরা করতে পারে, বাড়িতে নিরাপদে ঘুমাতে পারে। তবে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মত সব পেশাতেই ভালো মন্দের মিশেল রয়েছে। পুলিশ সম্পর্কে প্রায়ই নানা বির্তকিত খবর আমরা শুনতে পাই। আমরা প্রায়ই শুনি চেকপোস্টে পুলিশের হয়রানি কিংবা পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কথা। এসব কারণে পুলিশের উপর মানুষ আবার বিরক্তও কম নয়। কতিপয় কিছু পুলিশের কারণে মানুষ সমগ্র পুলিশ সদস্যদের উপর এক প্রকার জেদ উগরে দেন। যার প্রতিফলন আমরা কয়েকদিন পূর্বে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল প্ল্যাকার্ডেই দেখেছি। কিন্তু এসবের উর্ধ্বে অনেক পুলিশ সদস্য আছেন যাদের জন্য আসলেই গর্ব হয়। তাদেরই একজন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম, পিপিএম। গতকাল তিনি না থাকলে কুখ্যাত ওই ছিনতাইকারীর হাতে খুনও হতে পারতেন মো. আমানউল্লাহ আমান।
জানা যায়, ভুক্তভোগী ব্যক্তি মো. আমানউল্লাহ আমান (৫৩) যিনি জাতীয় দলের একজন ফুটবলার ছিলেন। তিনি তার অসুস্থ মেয়ে ফাতেমা জান্নাত লোভা ওরফে অর্পিকে (১৮) নিয়ে হাসাপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। কুমুদিনী মাঠের নিকট আসার পর ছিনতাইকারী খোকন তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। ছিনতাইকারী খোকনের সাথে মো. আমানের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খোকন আমানের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম, পিপিএম বলেন, আমার সাহসীকতার চেয়ে ওই লোকের সাহসীকতার প্রশংসা করতে হয়। ৫৩ বছর বয়সী একজন লোক এই রকম এক কুখ্যাত ছিনতাইকতারীর সাথে একা লড়ে গেছেন তাই তার প্রশংসা পাওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময়ই চাই মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করুক। মানুষের নিরাপত্তা দিতে আমরা সবসময় সচেষ্ট। মানুষ যখন বলে আমাদের কারণে তারা নিরাপদ বোধ করে তখনই আমরা আমাদের কাজের স্বার্থকতা খুঁজে পাই।