আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খোরশেদ ব্যর্থ শিক্ষক!

বিশেষ প্রতিবেদক
জনপ্রিয়তার কোন কমতি নেই তা আগে থেকেই সবার জানা। তিন তিনটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিদের বিপুল ভোটে পরাজিত করে জয়ী হওয়াই বলে দেয় সে কথা। এবার করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে নতুন রূপে হাজির হয়েছেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। জাত-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিদের কেমন হতে হয়। তবে এরই মধ্যে ব্যর্থ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রমান করেছেন তিনি।
খোরশেদের নানা পরিচয়। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, আইনজীবী ও বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই। তার আরেক ভাই সাব্বির আলম খন্দকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতিও খোরশেদ। তবে সব পরিচয় ছাপিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থাকতে কমিশনার হন এরপর সিটি কর্পোরেশন হলে আরও দুইবার একই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হন এ যুবদল নেতা। প্রতিটি নির্বাচনে তার একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বি থাকে। এরমধ্যে কেউ কেউ ক্ষমতাসীনদলের ক্ষমতাবান নেতা থাকেন। চেষ্টা করেন নিজের ক্ষমতা দেখাতেও তবে তারা তেমন ভোট পান না। ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খোরশেদের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন ৮ জন। এ ৮জন মিলে খোরশেদের অর্ধেক ভোট পেয়েছিলেন!
এসব অনেক পুরনো কথা। এবার করোনা পরিস্থিতিতে অনেক জনপ্রতিনিধি যখন নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন তখন খোরশেদ ছিলেন ব্যতিক্রমন। শুরুতেই তিনি সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করেন। এরপর স্যানিটাইজার তৈরী করে তা বিলাতে থাকেন। দেন খাদ্য সহায়তাও। তবে সবচেয়ে যে কাজ করে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তা হলো মৃত মানুষের দাফন করা।জামতলার বৃদ্ধ আফতাবউদ্দিন যখন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন তখন তার আত্মীয়স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার সহযোদ্ধারা আফতাবউদ্দিনের লাশ দাফন করেন। শহরের পরিচিত ব্যবসায়ী খোকন সাহা মারা যাওয়ার পর তার লাশ সিঁড়িতে পরেছিলো। এখানেও হাজির হন খোরশেদ। তিনি তার দাহের ব্যবস্থা করেন। এরপর পরিবারের অনুরোধে মুখাগ্নিও করেন তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এ জনপ্রতিনিধি। তার কর্মকান্ডে তিনি বুঝাতে চাইছেন, কেমন হতে হয় জনপ্রতিনিধিকে।
এ প্রসঙ্গে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, মানুষ মরে পরে থাকবে কেউ তাকে ধরবে না দাফনের ব্যবস্থা করবে না তাহলেতো আরও সমস্যায় পরতে হবে। কাউকে না কাউকেতো এগিয়ে আসতে হবে। সে চিন্তা থেকেই আমি এ কাজ শুরু করি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোন ধরনের রাজনীতি কিংবা চালাকি নয় মহান আল্লাহকে খুশী করতেই আমি ও আমার সহযোদ্ধারা এ কাজ করছেন।
হাফেজ শিব্বির আহমেদ নিজের অন্ত;সত্তা স্ত্রীকে ঘরে রেখে যোগ দিয়েছেন কাউন্সিলর খোরশেদের দলে। তিনিও জানান, আল্লাহকে রাজি খুশী করতেই এ কাজে এসেছি এবং শেষপর্যন্ত থাকবো। নিজের গর্ভবর্তী স্ত্রী সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীও আমাকে এ কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে।
সচেতন মহলের মতে, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যা করছেন তা একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধির কাজ। তবে তার এ মহৎ কাজ থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না অন্যরা। ইচ্ছে করে তার মতো করে আরও অনেকেই এগিয়ে আসতে পারতো এ দুর্যোগ মোকাবেলায়। এখানে খোরশেদ একজন ব্যর্থ শিক্ষক বলে মনে করেন সচেতন মহল। তবে যুগ যুগ ধরে খোরশেদের এ মহৎ কাজ মানুষ মনে রাখবে আর ইতিহাসের পাতায় তা আলো ছড়াবে।