আজ শুক্রবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কে হচ্ছে নৌকার মাঝি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে দাড় করান প্রতিপক্ষ। আর প্রকাশ্যে আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়ে গেছেন ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়। তবে শেষতক মেয়র আইভীর হাতে নৌকার মনোনয়ন তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই পুরাতন খেলা এবার নতুন রূপে শুরু হয়েছে, এবার যুক্ত হয়েছে বাড়তি মাত্রা।
গতবার নির্বাচনপূর্বে ২৭টি ওয়ার্ডে ৫৪জনকে সভাপতি সেক্রেটারি দেখিয়ে আইভীকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে একটি রেজুলেশন করা হয়েছিলো। সুত্রের খবর এবারও সেই একইভাবে ৫৪ জনকে সভাপতি-সেক্রেটারি দেখিয়ে রেজুলেশন করা হয়েছে। মূলত আইভীকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে এই আয়োজন বলে জানা গেছে।

পৌরপিতা আলী আহমেদ চুনকা কন্যা ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী এ পর্যন্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনেই দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে নানা খেলা হয়েছে। ২০১১ সালে নাসিক প্রথম নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। সেবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন শামীম ওসমান, আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ে জিতেছিলেন ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। দু’টি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে আর একটিতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতাকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন তিনি । ২০০৩ এ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে তেমন খেলা না হলেও পরের দু’টি সিটি নির্বাচনে নানা রঙের খেলা দেখেছে সচেতন মহল। তাদের মতে, আইভীকে ঠেকাতে যেমন এক পক্ষ নতুন নতুন খেলার অবতরণ করেছে আবার আইভীকে জেতাতেও আরেক পক্ষ ছিলো তৎপর।

২০১৬ সালে আইভীর দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে নামেন প্রতিপক্ষ। তারা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দেন।
তিনি আইভীকে দলীয় মনোনয়ন দেন সেই সাথে সবাইকে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে আনোয়ার হোসেন আর নাসিকের দিকে তাকায়নি। তিনি এবার আইভীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন। তাতে আইভী দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

অপর দিকে এবারও আইভীর দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে তার প্রতিপক্ষ কিছুদিন মাঠে রয়েছে। ইতোমধ্যে ওসমান বলয় থেকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা—।

নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র পদে এবারও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ হচ্ছে। নেত্রীর উপর নির্ভর করছে দলীয় মনোনয়ন। তিনি যাকে দেবেন সেই হবে নৌকার মাঝি।

সুত্রের খবর দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন চুনকা কন্যা। আইভীসহ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন হাইকমান্ডের সংকেতের অপেক্ষায় আছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ রত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ রত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি’র সরকারী বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ঠ সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
একটি সূত্র বলছে, সভায় আগামী ১৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র কে হচ্ছেন তা চূড়ান্ত করা হতে পারে।

উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ১৬ জানুয়ারি ইভিএম পদ্ধতিতে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর। আইভী বলয় থেকে আইভী একাই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার প্রতিপক্ষের বলয় থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।