সংবাদচর্চা অনলাইনঃ
করোনার শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নেমেছিলেন জীবনের মায়া ত্যাগ করে। তার এ কাজে প্রথমে তিনি একা থাকলেও আজ অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ২০২০ সালের ৯ মার্চ করোনা যুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন এই কাউন্সিলর। ওইদিন নিজেই গঠন করেছিলেন টিম খোরশেদ। সেই করোনা যুদ্ধের ১ বছর পূর্ণ হবে আগামী ৯ই মার্চ।
টিম খোরশেদের কার্যক্রমের মধ্যে ছিলো, করোনায় আক্রান্তদের দাফন-সৎকার, করোনাকালীন লকডাউনে ঘরে ঘরে খাদ্য বিতরণ, করোনার শুরুতে জনসচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ, অনলাইন অফলাইনে মানুষকে ঘরে থাকতে ও সচেতন করতে নানা কার্যক্রম হ্যান্ড স্যানিটাইজার, লিকুইড সাবান তৈরী ও বিতরণ, সরকারী ও নিজস্ব উদ্যেগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, ভর্তুকি মূল্যে ডিম ও খাদ্য সামগ্রী বিক্রি, টেলি মেডিসিন সেবা, অক্সিজেন সার্পোট, এমবুলেন্স সার্পোট, প্লাজমা ডোনেশনসহ নানা কার্যক্রমে তিনি সর্বত্র আলোচিত।
তার এ যুদ্ধে সাহস পেয়েছে পুরো দেশ এবং একে একে এগিয়ে এসেছে অনেকেই এসব কার্যক্রমে। অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে খোরশেদ যেন এক নতুন সৈনিক যে কিনা অদৃশ্য এক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা অব্যাহত রেখেছেন। ১ বছর পরেও তিনি সেই কথাই বললেন, জানালেন অব্যহত থাকবে প্রতিটি মূল্যবান জীবন রক্ষার এই লড়াইটা।
এই কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, অগনিত মাস্ক বিতরণ, শহরের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন, নিজের তৈরী ৫০ এমএল এর ৬০ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, ২৫০ এমএল এর ১০ হাজার বোতল লিকুইড সাবান প্রস্তুত ও বিতরণ, ১৫৩ জন ব্যক্তির (ঢাকা, নারায়াণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার) দাফন ও সৎকার (২ মাচ ২০২১ পর্যন্ত তথ্য), ৬ হাজার পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ (চাল-আলু / চাল-ডাল) বিতরন, শুভাকাংখীদের সহযোগিতায় ঈদুল ফিতর ২০২০ এ ৬ হাজার ৭শ পরিবারকে টিম খোরশেদের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি ও সেমাইয়ের প্যাকেজ) উপহার বিতরণ, ১০ হাজার পরিবারকে সবজি বিতরণ (পরিবার প্রতি ৩ কেজি), ১০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে ১১ হাজার মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান, ৩০ শতাংশ ভর্তুকিতে ১৫শ মধ্যবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী প্রদান, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে টাইম টু গীভ এর সহায়তায় প্রথম দিনে ৩ টাকা ও দ্বিতীয় দিন থেকে ২ টাকা হারে পরিবার প্রতি ৬টি করে ৪০ হাজার ডিম বিতরণ, দূর্গা পূজায় ২ হাজার হিন্দু পরিবারকে টিম খোরশেদের খাদ্য সামগ্রী( চাল, ডাল, লবন) উপহার প্রদান, ১০৪ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিনামূল্যে প্লাজমা ডোনেশন, বিনামূল্যে ১৯২ জনকে অক্সিজেন সাপোর্ট প্রদান, ৮৯ জনকে মডেল গ্রুপের সহায়তায় ফ্রী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান, টাইম টু গীভ ও নুর সুফিয়া ফাউন্ডেশন এর সহায়তায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৭ জনকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ২০ পরিবারকে টাইম টু গীভ ও প্রিসিলা ফাউন্ডেশন, কুইক রেসপন্স ১২, হেল্প দ্যা ওয়ান’স ইন নিড ও ইপিলিয়ন ফাউন্ডেশন এর সহায়তায় সেলাই মেশিন প্রদান ও ১০ যুবককে ফুড রাইডিংয়ের জন্য বাইসাইকেল প্রদান করা হয়। (সকল তথ্য ৬ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত)
এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি, তার স্ত্রী এবং তার কয়েকজন টিম মেম্বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও যুদ্ধটা থেমে যায়নি বরং সুস্থ হয়ে নিজেরাই প্লাজমা দিয়েছেন এবং পুরোদমে আবারো কাজ করেছেন। খোরশেদ নিজেই তিনবার প্লাজমা দিয়েছেন।
তার এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন প্লাজমা টিমে খন্দকার নাঈমুল আলম, আরাফাত খান নয়ন, ইসতিয়াক সাইফি, শাহেদ আহমেদ, রিজন আহমেদ, অক্সিজেন টিমে এসএম কামরুজ্জামান, দাফন টিমে হাফেজ শিব্বির, আশরাফুজ্জামান হিরাশিকো, হাফেজ মোঃ রিয়াদুর রহমান রিয়াদ,আনোয়ার হোসেন, সুমন দেওয়ান, জুনায়েদ, আক্তার শাহ, আয়ান আহমেদ রাফি, আল-আমিন খান,রফিক হাওলাদার, মাসুদ আহম্মেদ,আফতাব,মেহেদী রাজু,লিটন মিয়া, শফিউল্লাহ রনি, নাঈম মোল্লা, সেলিম মোল্লা, শহীদ ও রানা মুন্সী, ত্রাণ টিমে জয়নাল আবেদীন, আনোয়ার মাহমুদ বকুল, নাজমুল কবীর নাহিদ, আওলাদ হোসেন,রিটন দে, শওকত খন্দকার, রানা মুজিব, মাসুদ রানা,নারী টিমে তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা, মেম্বার রোজিনা আক্তার, উম্মে সালমা জান্নাত, শিল্পী আক্তার, রাণী আক্তার, দিলারা মাসুদ, রহিমা শরীফ, টেলি মেডিসিন টিমে ডা. জেনিথ, ডা. ফায়জানা ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, ডা. আরিফুর রহমান, ডা. খাদিজাসহ ১০ জন চিকিৎসক। পুরো টিমের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন আলী সাবাব টিপু। বিভিন্ন টিমে সর্বমোট ৬০ জন স্বেচ্ছাসেক দিন রাত কাজ করেছেন। বর্তমানেও টিম খোরশেদ এর ১০০% ফ্রী দাফন-সৎকার, অক্সিজেন, প্লাজমা, এম্বুলেন্স,ভ্যাকসিন রেজিঃ সহায়তা চলমান।
কাউন্সিলর খোরশেদ জানান, এ লড়াইটা মানবিকতাকে টিকিয়ে রাখতে। প্রথমদিকে এমন একটা সময় ছিল যখন বাবা মারা গেলে সন্তান ভয়ে সে ঘরেও যেতো না। লাশ আমরা আনতে গেলে ঘরের চাঁদরসহ আমাদের দিয়ে দিতো। তখন এই মানবিক সংকট কাটাতে আমরা মাঠে নামি। ধীরে ধীরে ভয় কাটে মানুষ এগিয়ে আসে। এখন সেই আগের অবস্থা নেই। আমাদের লড়াইতে সবাইকে বাঁচাতে না পারলেও যে কয়জনের প্রাণে বেঁচেছে তাতেই আমাদের পাওয়া। আমরা চাই মানবিকতা টিকে থাকুক, সতকর্তায় করোনা মোকাবেলা হোক।যতদিন প্রয়োজন আমরা ততদিন মাঠে থাকবো ইনশাল্লাহ।
খাদ্য সামগ্রী, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, এম্বুলেন্স, চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করায় অনুদান দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন খোরশেদ।