আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কমিটি নাকি নির্বাচন

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

বছর শেষ। সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। কবে নাগাদ হবে, এ নিয়েও সংশয়। যদিও শোনা যাচ্ছে, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের কারণে কেন্দ্রে আটকে আছে কমিটি। তবে, এর বাইরেও আরও নানা ধরণের কোন্দলের খবর শোনা যায়। মূলত এসব কোন্দলের কারণেই কমিটি আটকে আছে বলেই মনে করেন দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ইতোপূর্বে শোনা গিয়েছিল, কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের মধ্যকার দ্বন্দ্বে কমিটি আটকে আছে। তারা একজন উত্তর পন্থী অপরজন দক্ষিণ পন্থী হিসেবে কাজ করছেন। তবে, তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের নিরসন হয়েছে। এক টেবিলেও বসেছিলেন তারা। এরপরও কমিটি আসেনি। ফলে মূল দ্বন্দ্বের পেছনে কমিটিতে উত্তর পন্থী শামীম ওসমান এবং দক্ষিণ পন্থী আইভীর মধ্যকার দ্বন্দ্বই আসল। এ কারণেই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় খসড়া কমিটি পাঠানো হলেও অনুমতি এখনও হয়নি।
এদিকে আগামী ১৯ অক্টোবর বর্ধিত সভা ডেকেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এই সভাতে উপস্থিত থাকবেন দলটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। সভায় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি, মন্ত্রী, মেয়র, চেয়ারম্যানদেরকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এদিন নেতাকর্মীদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করা হতে পারে। আর সে হওয়ার পরই ঢাকা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার জন্য কথা ঠিক। কিন্তু এই বর্ধিত সভার পরপরই যে কমিটি ঘোষণা করা হবে, সেটি ঠিক না। নির্বাচনের পূর্বে কমিটি ঘোষণা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা, কমিটিতে স্থান পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও বেশি বাড়তে পারে। এমন ভাবনা থেকেই নির্বাচনের পূর্বে কমিটি ঘোষণা না করার সম্ভাবনা।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে তার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গঠন হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগেরও একই বেহাল দশা। গত বছরের ২৩ অক্টোবর ওসমানী স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সম্মেলনে আবারও আব্দুল হাইকে সভাপতি ও আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগকে সম্মেলনের তাগিদ দিলেও তা আর হয়নি। এর মধ্যে জেলার জন্য আবদুল হাই, আবু হাসনাত শহীদ বাদল ও সেলিনা হায়াৎ আইভী পৃথক তিনটি কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়াতে কমিটি ছাড়াই কোনোরকম ঢিলেঢালাভাবে চলছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। কোনো পদ পদবী না থাকায় অধিকাংশ নেতাকর্মী পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। একই সঙ্গে দল পরিচালনা করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ১৯ অক্টোবর হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। জেলা পার্টি অফিসে ওই বর্ধিত সভায় কমিটি থেকে শুরু করে নেতায় নেতায় বিরোধ অবসানের চেষ্টা করা হবে বলেই শোনা যাচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, এবার হয়তো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কমিটির জট খুলবে। তবে কবে নাগাদ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে তা সময়ই বলে দিবে। কারণ নভেম্বরের শুরুতেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে। তাই আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়া অনেকটাই অসম্ভব বিষয়। কেননা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বর্তমানে নির্বাচনী রোডলাইন নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সূত্র বলছে, বর্ধিত সভায় নির্বাচনকালিন যাতে কারো মধ্যে দ্বন্দ্ব না থাকে মূলত সে বিষয়টিকেই জোর দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব নিরসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এখানে কমিটি বিষয়ক নানা বক্তব্যই আসবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ১৯ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের যে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে সেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান উপস্থিত থাকবেন। একই সভাতে হিসেবে অনুযায়ি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকেও উপস্থিত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। তবে, তারা দুজন একই সঙ্গে একই সভাতে থাকবেন কিনাÑ এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝেও কৌতহল সৃষ্টি হয়েছে।