আজ শনিবার, ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঐক্যমত্য কমিশনের সভায় নারায়ণগঞ্জের ছাত্রনেতা ফারহানা মুনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১২তম দিনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জের ছাত্রনেতা ফারহানা মানিক মুনা। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে মুনা সভায় অংশ নেন। এদিন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং জরুরি অবস্থা জারি-সংক্রান্ত সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংযোজনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

ফারহানা মানিক মুনা বাংলাদেশ ছাত্রফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ও গণসংহতি আন্দোলনের সদস্য। সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ মুখ ফারহানা মানিক মুনা।

সভায় অংশগ্রহণ বিষয়ে মুনা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজ চলছে। সেই কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হোসেন রুবেলের সঙ্গে আমি সভায় অংশ নিই। এধরণের সভায় যোগ দেয়া রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে সরাসরি যুক্ত হওয়া৷ বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আজ ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে জানিয়ে সভাশেষে সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেন,
এর আগের বৈঠকে সংবিধানে বিদ্যমান ৯৫ অনুচ্ছেদ ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সংশোধনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল। আজকের বৈঠকে আরও তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন। অবশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সংবিধানে এমন বিধান সংযোজন করতে পারবে যে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতির মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি যেকোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন। তবে শর্ত থাকছে যে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের অভিযোগের কারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তপ্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাঁকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আজকের আলোচনায় প্রথমত জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)-এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে। বিষয়গুলো হলো অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আরও বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া জরুরি অবস্থা চলাকালে অনুচ্ছেদ ৪৭(ক)-এর বিধান সাপেক্ষে কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার (রাইট টু লাইফ) এবং বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাবে না।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।