আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এসপির হস্তক্ষেপে লুট হওয়া মাল উদ্ধার গ্রেফতার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুন অর রশীদ যোগদানের পর থেকেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা, ঝুট সন্ত্রাসী সহ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি। একের পর এক সুনাম প্ওায়ার মত কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন এসপি হারুন। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মৌচাক এলাকায়। এসপির কাছে ভূক্তিভোগী জমির মালিক ও ভাড়াটিয়া সহযোগীতা চেয়ে হস্তক্ষেপ চাওয়ার সাথে সাথেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীন পারভেজকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করান এসপি হারুন।

সিদ্ধিরগঞ্জে জমি দখলের চেষ্টা ও মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশ । পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের হস্তক্ষেপে মামলা  হয়েছে  । মামলার পর সুষ্ঠু বিচার পাওয়ায় এসপি হারুনকে সাধুবাধ জানায় ভুক্তভোগী জমির মালিক ও ভাড়াটীয়া।

সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকে ফারুক ভূইয়ার সম্পত্তি দখলের চেষ্টাকারী ও সতের লাখ টাকার মালামাল ছিনতাইকারী দলের মূল হোতা আসমা বেগমকে আটক করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এর আগে বৃহষ্পতিবার মধ্য রাতে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের নির্দেশে ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় আসামীরা কৌশলে পালিয়ে যায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মৌচাক ধনুহাজী রোডস্থ স্বরুপকাঠী নার্সারীর পাশের সাড়ে নয় কাঠা সম্পত্তির ক্রয়সূত্রে মালিক ফারুক ভূইয়া ও মজিবর। এরা দুজনই দেশের বাইরে চাকরী করেন। তাদের এই জায়গাটি গোডাউন ও অফিস নির্মান করে মাসুদ রানা নামের এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেন।

আর এই সম্পত্তিটি দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে দখলের পায়তারা চালাচ্ছে লেডি ভূমিদস্যু আলী সাউদের স্ত্রী আসমা বেগম ও তার ছেলে শরীফ হোসেন এর বাহিনী।

জানা যায়, স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধীর সহযোগীতায় তারা ফারুকের সম্পত্তি দখল করতে মরিয়া উঠেছেন। গত ৯ এপ্রিল আনুমানিক ২ টায় সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল এলাকার আলী সাউদের স্ত্রী আসমা বেগম (৫০) তার ছেলে শরীফ হোসেন (২২), অনিক (২০), সাজু (৩০), ইউসুফ (৩৫), সহ আরো ১০/১২ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মৌচাকস্থ ধনুহাজীর এলাকার গোডাউনে বেআইনীভাবে জোড়পূর্বক ডুকে ফারুক ভূইয়াকে খোজাখুজি করে।

ফারুককে না পেয়ে ভাড়াটিয়া মাসুদকে জায়গাটি খালি করতে হুমকি দেয় আসমা বেগমের সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় তারা ভাড়াটিয়া মাসুদ রানাকে এলোপাতারিভাবে মারধর করে ও তালা ভেঙ্গে সতের লাখ টাকার চুন ও পয়ত্রিশ হাজার টাকার কয়েল লুট করে নিয়ে যায়। লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা ফারুক ও মাসুদকে প্রান নাশের হুমকি দিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী ফারুক জেলা পুলিশ সুপার  হারুন অর রশীদের হস্তক্ষেপ কামনা করে। এসপির হস্তক্ষেপে পরবর্তীতে ১ লা মে এই বিষয়ে মামলা নেয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। মামলা নেওয়ার পর ২ মে মধ্যরাতে উক্ত থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম মিয়ার নেতৃত্বে এসআই ইব্রাহীম সহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে লুট হওয়া মালামালের প্রায়ই ১০৫০ বস্তা চুন উদ্ধার করে। পরে ৩ মে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টায় আসমা বেগমকে আটক করে পুলিশ।

উক্ত সম্পত্তির মালিক ফারুক ভূইয়া জানান, এই জায়গাটি আমি ও আমার বন্ধু মুজিবর ক্রয়সূত্রে মালিক। যা বর্তমানে আমরা গোডাউন ও অফিস নির্মান করে মাসুদের কাছে ভাড়া দিয়েছে। আমি ফেনি জেলার বাসিন্দা। আমি এবং আমার বন্ধু মুজিবর বিদেশে চাকরী করি। এই জায়াগাটির হোল্ডিং নম্বর থেকে শুরু করে যাবতীয় কাগজপত্রাদি আমাদের নামে। আমাদের এই সম্পত্তিটি দীর্ঘদিন যাবৎ আসমা বেগম দখলের চেষ্টা করছে। আমার ভাড়াটিয়ার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গেলে সেখানে ওসি আমাকে মামলা নেওয়ার বিষয় অস্বীকৃতি জানায় এবং আদালত থেকে মামলা করে আসতে বলেন। এমতাবস্থায় আমি এসপি স্যারের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করলে তার হস্তক্ষেপে এই বিষয়ে মামলা নেওয়া হয়। আমার ভাড়াটিয়ার লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার হয় এবং আসমা বেগমকে আটক করা হয়। এসপি স্যার আমাদের সহযোগীতা করছেন। তার জন্য আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছি। আমি আল্লাহ এর কাছে এসপি হারুন স্যারের জন্য হাতে তুলে দোয়া করি এবং তাকে ধন্যবাদ জানাই।

জায়গার ভাড়াটিয়া মাসুদ রানা জানান, আমাকে মারধর করে জোরপূর্বক আমার গোডাউনের তালা ভেঙ্গে আমার সতেরো লাখ টাকার মালমাল ছিনতাই করে নিয়ে যায় আসমা বেগম গংরা। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে জানালে প্রথমে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে এসপি স্যারের হস্তক্ষেপে মামলা নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে আমার মালামাল উদ্ধার করে দেয় পুলিশ।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীন পারভেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি জমিসংক্রান্ত। উক্ত মামলার বাদী ফারুক মামলা করতে আমার কাছে আসেই নাই। বিবাদী আসমা বেগম গন থানায় আগে আসছে। তখন এসাই মাহবুব ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে। ওই বিষয়টা এসআই মাহবুব ভাল বলতে পারবেন।  এ বিষয়ে মামলা নেওয়া হয়েছে। এসপি স্যার আমাকে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশ দেন নাই। স্যারের কাছে কোন হস্তক্ষেপের বিষয় আমার জানা নাই।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম মিয়া জানান, মামলার ভিত্তিতে আমার নেতৃত্বে ও এসআই ইব্রাহীম সহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ছিনতাই হওয়া মালের ১০৫০ বস্তা চুন উদ্ধার করি। ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামীরা কৌশলে পালিয়ে যায়। তদন্ত করে ফারুক ভূইয়া জায়গার প্রকৃত মালিক বলে সততা পাই। এবং আসমা বেগম গং ফারুকের সম্পত্তি দখলের পায়তারা করছে সত্যতা পাই। পরে রাত সাড়ে ৯ টায় আসামী আসমা বেগমকে শিমরাইল থেকে আটক করি। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলমান রয়েছে।