আজ শনিবার, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

উচ্ছেদের পরও বসছে হকার!

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
সড়কে বসি কিংবা না বসি, ব্যাবসা হোক বা না হোক প্রতিদিনের চাঁদার টাকা দিতেই হবে। প্রতিদিনের এই চাঁদার হাত থেকে নিস্তার নেই। কথাগুলো বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতের সাবেক একজন ব্যবসায়ী রিফাত (ছদ্মনাম)। রিফাত জানান, আমরা যারা সড়কে ব্যবসা করি সকলেই চাই শৃঙ্খলা বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে কিন্তু আমরা চাইলেইতো হবে না।

সকলেই বলে হকারদের কারনে ফুটপাতে সাধারণ মানুষ চলতে পারে না। স্বাভাবিক চলাচলে ব্যত্যয় ঘটায় ফুটপাত দখল করে রাখা হকাররা। রিফাত নগরির সচেতন বিবেকবানদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ফুটপাতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কি শুধুই আমরাই দায়ী? তিনি বলেন, আমরা যারা হকার ফুটপাতে ব্যবসা করি তাঁরা সকলেই ফুটপাতের এক পাশ দখল করে সারিবদ্ধ ভাবে দোকান সাজিয়ে ব্যবসা করি। সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষরাই। অনেক মানুষই কিছু কেনার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ফুটপাতে থাকা দোকানের পন্য দেখছেন। এরকম একজন নয় অনেক মানুষই আছে যারা অহেতুক ফুটপাতে ভিড় সৃষ্টি করে ফুটপাত চলাচলের অনুপযোগী করে তুলেন।

অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) কর্তৃপক্ষ সপ্তাহ ব্যাপী ফুটপাত অপসারণ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়েছে। নাসিকের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়ক সহ চাষাড়া বালুরমাঠ এলাকায়ও এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করার সময় দেখা গেছে, নাসিকের অভিযান পরিচালনাকারী টিম যখন নগরির বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই ধারের ফুটপাতগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে একটু একটু করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন পিছনে হকাররা পুনরায় সেই সকল স্থান দখল করছে। আর এভাবেই গত দু’দিন ধরে নগরির বিভিন্নস্থানে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং উচ্ছেদের পর হকার আবার তাঁদের নির্ধারিত স্থান দখল করছে।

অভিযানের এ সকল চিত্র দেখে নগরির সচেতন নাগরীকদের ভিতরে চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কেমন অভিযান হুম? তারা অভিযান করে উচ্ছেদ করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আর হকাররা পিছনের উচ্ছেদকৃত স্থানে পুনরায় পস্রা সাজিয়ে ব্যবসা করছে। অভিযান পরিচালনাকারী টিম শুধু অভিযান পরিচালনা করে শুধু সামনের দিকেই যাচ্ছে অথচ তারা একটি বারের জন্যও দেখছেননা যে, তাঁরা যে সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসছেন সেই স্থানগুলোকি ফাঁকা রয়েছে, নাকি হকাররা পুনরায় দখল করেছে। অথচ অভিযান পরিচালনাকারীদের সেই দিকে কোন নজরই নেই।

নগরীর ফুটপাতে ভ্রাম্যমান আদালতের লাগাতার অভিযান পরিচালনা করা সত্ত্বেও হকাররা পুনরায় ফুটপাত দখল করে কেন এমন প্রশ্ন করলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, যারা অভিযান পরিচালনা করছেন তাঁরা শুধু আমাদেরই উচ্ছেদ করছেন। আমরা সাধারণ হকাররা যাদের সহায়তায় এই শহরের

ফুটপাতগুলোতে ব্যবসা করি তাঁদের কেন কেউ উচ্ছেদ করছে না? একদিকে ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করে যে স্থান ফাঁকা করছেন তাঁরা চলে যাওয়ার পর হকাররা পুনরায় সেই স্থানে ফিরে এসে পস্রা সাজিয়ে ব্যবসা করছে। এটা করা ছাড়া কোন উপায়ও নেই কেননা যারা প্রতিদিন চাঁদা নেন তারা এ সকল অভিযানের অজুহাত কানে তুলেননা। সড়কে ব্যবসা করতে হলে প্রতিনিয়ত তাঁদের চাঁদা দিতে হয়। প্রতিকুল আবওহাওয়া কিংবা সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের ফলে যে সকল দিন গুলোতে হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করতে পারেনা, সেই সকল দিনগুলোতে হকার্স নেতাদের চাঁদা মউকুফ হয় না।

ইতি পূর্বে নগরীর ফুটপাতের নৈরাজ্য এবং ভয়ংকর চাঁদাবাজী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদচর্চায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ পেলে ফুটপাত নৈরাজ্যের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন রূপ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। যাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আইনাননুক ব্যবস্থা গ্রহন করছে তারা নিছক একজন সাধারন ব্যবসায়ী। এ সকল সাধারণ ব্যবসায়ীরা ফুটপাত নৈরাজ্যের সাথে সম্পৃক্ত না।

ফুটপাত নৈরাজ্যের বিষয়ে নগরীর বোদ্ধামহল মনে করেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের লাগাতার উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখল মুক্ত রাখা যাবে না! আমাদের শহর জুড়ে অনেক মাদক সেবী আছে। এখন আমরা যারা সচেতন নাগরিক কিংবা অভিভাবক রয়েছি তাঁরা যদি শুধু মাদক সেবীদের বিরুব্ধে সোচ্চার হয় তাহলে কি এই সমাজের মাদক ব্যবসাকে চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব হবে? শুধু মাদক সেবীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মাদকের বিশাল বিস্তার কোন ভাবেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি করেই নগরির ফুটপাতের সাধারণ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ কিংবা জেল জরিমানা করে ফুটপাত দখল মুক্ত করা সম্ভব নয়। নগরির ফুটপাত দখল মুক্ত করা তখনি সম্ভব হবে যখন এই ফুটপাত নৈরাজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

নগরবাসীর মতে, নগরীর ফুটপাতে যারা ব্যবসা করে তারা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসেছে। নারায়ণগঞ্জের হকারদের মধ্যে স্থানীয়দের উপস্থিতি খুবই কম। ভিনদেশী হকাররাতো আর এমনি এমনিতো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির দুই ধার দখল করতে পারে নি। পর্দার আড়ালেতো কেউনা কেউ আছে যারা এ সকল হকারদের ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছে অঢেল টাকা। তবে নগরীর কর্তৃপক্ষ হিসেবে যারা বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছেন তারা বিষয়টি ভালো করে তদন্ত করলে অবশ্যই পর্দার আড়ালে থাকা ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে চলে আসবে। অথচ কর্তৃপক্ষ ঘোড়ার মতো ছুটছেন শুধু ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের পিছনে। এদের পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে পর্দার আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে প্রকৃত নৈরাজ্যকারীরা।