আড়াইহাজার প্রতিনিধি
আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা গ্রামীণ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমে পাঁচটি গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কোনো কাজে আসেনি। তদারকির অভাব, অব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকদের পানির বিল আদায়ে ব্যর্থতার কারণে প্রকল্পটি চালু হওয়ার তিন বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার ৯ বছরেও স্কিমটি আজও চালু হয়নি।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের আওতায় আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা পাইপলাইনের মাধ্যমে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেয়। এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় এক কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় এলাকাগুলো হচ্ছে- কাঁঠালিয়াপাড়া, তাঁতীপাড়া, নগরপাড়া, গিরদা ও মানিমাপাড়া।
কাঁঠালিয়াপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাংশ জমির ওপর ১৮ মাসে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় এবং ২০০৭ সালের ১৫ অক্টোবর হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থায় এ স্কিমটি চালু করা হয়। এ স্কিমে প্রতিদিন ৬০ হাজার লিটার পানি ট্যাঙ্কে জমা থাকত। শুরুতেই উন্নত নগরীর মতো ওই এলাকার ৬১১টি পরিবার মাসিক মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে বিশুদ্ধ এ পানি সব কাজে ব্যবহারের সুযোগ পায়। চালু হওয়ার পর শুরুতে পানি সরবরাহ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচারিত হয়ে আসছিল।
২০০৯ সাল থেকে পানি সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা দেখা দেয়। অব্যবস্থাপনার ফলে পানি সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি, বিল পরিশোধে গ্রাহকদের সময়ক্ষেপণ এবং হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে গ্রাহকদের দুর্ব্যবহারের কারণে একপর্যায়ে পানি সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ করে স্পন্সর কর্তৃপক্ষ রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। এর পর ওয়াটার ইউজার কমিটির পক্ষ থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি চালু করার অনুরোধ করা হলেও বন্ধ হওয়ার ৯ বছরেও স্কিমটি চালু করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, পাম্প হাউস, ডিপটিউবওয়েল ও কর্মচারীদের থাকার জন্য একটি আধাপাকা টিনশেড ঘরসহ চারদিকে দেয়াল পড়ে রয়েছে। ঘরটি স্থানীয় মো. কাজল নামে এক ব্যক্তি দখল করে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। পাম্প হাউস, ডিপটিউবওয়েলসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের অনেক মূল্যবান জিনিস অরক্ষিত থাকায় চুরি হয়ে যাচ্ছে। কাঁঠালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মোতালিব জানান, মাসিক ১০০ টাকার বিনিময়ে তিনি সাপ্লাইর পানিপেতেন। তারা প্রতিদিন তিন টাইম পানি দিত। চালু হওয়ার পর প্রথম বছর ভালো সার্ভিস পেয়েছেন। পরে নিয়মিত পানি পেতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিল পরিশোধ নিয়ে কিছু গ্রাহকের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পানি সরবরাহ বন্ধ করে কর্মচারীরা রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। একই অভিযোগ গিরদা এলাকার নুরু, হাফেজ, সাবু, মোশারফ, সাদ্দাম, নাজিমউদ্দিন, দীন মোহাম্মদ, মিজানসহ আরও অনেকের।
দুপ্তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদা মোশারফ বলেন, উন্নত নগরীর মতো পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া উচিত হয়নি। পানি সরবরাহে জটিলতা, গ্রাহকদের বিল পরিশোধ নিয়ে সমস্যার বিষয়ে স্পন্সর কর্তৃপক্ষ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অথবা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে বিষয়টি সমাধান করা যেত। আমাদের বিষয়টি জানালে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করে দিতাম। তাহলে জনগণ সুপেয় ও আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হতো না।
এদিকে স্পন্সর কর্তৃপক্ষ হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসহ একাধিক মাধ্যমে চেষ্টা করেও তাদের বর্তমানে কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহীন আলম বলেন, প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, দুপ্তারা গ্রামীণ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমটি চালুর বিষয় নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গেআলোচনা চলছে।