নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে (আমলাপাড়া গার্লস স্কুল হিসেবে পরিচিত) বুধবার ১ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষায়ী গতবছরের (২০১৬) প্রশ্নপত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীরা ওই প্রশ্নপত্র দিয়েই উত্তরপত্র লিখে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হৈ চৈ ও বিক্ষোভ দেখালে এক ঘণ্টা পর নতুন প্রশ্ন সরবরাহ করা হলেও এক ঘণ্টা সময় বৃদ্ধি করেনি। এসব নিয়ে স্কুলে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কয়েকজন স্কুলে প্রবেশ করলে দ্রুত পালিয়ে যান প্রধান শিক্ষক শীতল চন্দ্র দে।
এ শিক্ষকের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত। এর আগে স্থানীয় এমপি নাসিম ওসমানের সাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে কারাভোগ করতে হয়। এছাড়া কোচিংয়ের নামে কয়েক মাস আগে অতিরিক্ত টাকা আদায়েরও অভিযোগ উঠে।
কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানায়, বুধবার জেএসসি পরীক্ষার ১ম দিনে শহরের বার একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় ও চিত্তরঞ্জন কটনমিল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ছিল নারায়ণগঞ্জ গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৫মিনিট পর ২০৮ ও ২০৯ নং কক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী কক্ষে দ্বায়িত্বে থাকা শিক্ষককে জানান তাদেরকে ২০১৬ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগে আমলে না নিয়ে উল্টো তাদেরকে বের করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই পশ্নপত্রেই পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাধ্য করেন পরীক্ষা হলে দায়িত্বেরত শিক্ষক মো. আরিফ।
১ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করলে বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শীতল চন্দ্র দে সেখানে গিয়ে নতুন প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। এসময় পরীক্ষার্থীরা তাদের ১ঘণ্টা সময় নষ্ট হওয়ায় বাড়তি সময় দেয়ার অনুরোধ করলে প্রধান শিক্ষকসহ উপস্থিত শিক্ষকরা তাদেরকে পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হবে বলে ভীতি প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে ২জন পরীক্ষার্থী বাইরে বেরিয়ে বিষয়টি জানালে সকল অভিভাবকরা এ নিয়ে হৈ চৈ শুরু করেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীরা তাদের এই পীক্ষা বাতিল ঘোষণা করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবী জানায়।
অভিভাবকরা জানান, জেএসসি পরীক্ষার্থী ফারজানা রোল নং ( ৬৬৬৪০৮), মারজিয়া জাহান রোল নং (৬৬৬৪১৩), মনিরা আক্তার রোল নং (৬৬৬৪১৫), জোবেদা রহমান রোল নং (৬৬৬৪১৮), আফসানা খানম রোল নং ( ৬৬৬৪১৯), সাগরিকা আক্তার রোল নং ( ৬৬৬৪২০), জান্নাতুল ফেরদৌস রোল নং (৬৬৬৪২৫), সোনিয়া আক্তার রোল নং ( ৬৬৬৪৪২৬), সোনিয়ার আক্তার রোল নং ( ৬৬৬৪২৭) সহ কমপক্ষে ১৫ জন পরীক্ষার্থী এই ঘটনার শিকার হয়েছে।
অভিভাবক ফেরদৌস আরা জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক শীতল চন্দ্র দে’র সাথে আলাপ করলে তিনি ভুল স্বীকার করে এর সমাধান করবেন বলে জানালেও এক পর্যায়ে অভিভাবকদের প্রশ্নের মুখে তিনি চলে যান। পর তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিভাবক রেজাউল করিম লিটন জানান, এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কারাগারে যাওয়া এই প্রধান শিক্ষকের বিরুেদ্ধ প্রশ্নপত্র ফাঁস, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে অভিভাবকরা একাধিকবার মানববন্ধন সহ আন্দোলন করেছিলেন। অভিভাবকরা এই প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রেজাউল বারী দুঃখ প্রকাশ করে জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিক তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে জানালে পরীক্ষার্থীরা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রেখে বড় ধরনের অপরাধ করেছে। তাদের উচিত ও দায়িত্ব ছিল বিষয়টি সাথে সাথে আমাদেরকে জানানো।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিনি জানান যেহেতু সারা দেশে একই সাথে পরীক্ষা হয়ে গেছে তাই নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবী মানাটা জটিল বিষয়। তারপরেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।