সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলছে। বিগত দিনের দুই মেরুর দ্বন্দ্ব না মিটালে বন্দর উপজেলায় আবারও সুযোগ নিবে বিএনপি এমনটাই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ। আওয়ামীলীগ নেতাদের দাপটে রাজপথে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে না পেরে বিএনপির অনেক নেতা রাজনীতি থেকে ইউটার্ন দিয়েছেন। তবে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতারা রাজপথে না থাকলেও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামীলীগই বলে দাবী করেছেন তৃণমূল যার ধারায়, উপজেলা নির্বাচন, বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতার লড়াইসহ নানা করণে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে গ্রুপিং এখন আরো বাড়ছে।
জানা যায়, আওয়ামীলীগ থেকে কেন্দ্রে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতিক দেবার জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানের নাম। দুই জন দুই মেরুর হওয়াতে দ্বন্দ্বটা প্রকাশ্য না হলেও অভ্যন্তরিণ রুপ ধারণ করেছে। আর আওয়ামীলীগের এই দ্বন্দ্বে সুযোগে সৎ ব্যবহার করতে পারেন বিএনপির উপজেলা প্রার্থী।
গত ২০১১ সালে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়ার ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলয়ে দুই মেরুতে অবস্থানের পর উভয়ের কর্মী সমর্থকরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তিতে নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানবীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্ব বেগ পায়। মেয়র আইভী ত্বকী মঞ্চের সমাবেশে প্রকাশ্যে ওসমান পরিবারকে খুনি পরিবার হিসাবে আখ্যায়িত করার পর দ্বন্দ্বের আকার আরও চরমে উঠে যায়। গত নাসিক মেয়র নির্বাচনে শামীম ওসমান মেয়র আইভীর পক্ষে কাজ করার ঘোষনা দিলেও পরিস্থিতি তেমন উন্নতি ঘটেনি। শুধু তাই নয়, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের আসন থেকে ২০১৪ সালে উপ নির্বাচনে সেলিম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিক বার শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীকে এক টেবিলে বসার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
শেষতকে গত বছর জানুয়ারিতে হকার ইস্যুতে আইভীর সমর্থকদের সাথে শামীম ওসমানের সমর্থকদের সংঘর্ষে মেয়র আইভী আহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি শামীম আইভীর বিরোধ নিরসনে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন।
অনেক তৃনমূল নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের শত্রু এখন খোদ আওয়ামীলীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যে অবস্থা শুরু হয়েছে তাতে নারায়ণগঞ্জের ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে বিরোধী দলের প্রয়োজন নেই।তারা নিজেরাই নিজেদের বিরোধিতা করছেন।
জানাগেছে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক ইস্যূতে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হওয়ায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আড়াইহাজারে এমপির সমর্থকদের দাপটে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী এলাকা ছাড়ারও অভিযোগ রয়েছে। একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে যে অপরাজনীতি শুরু হয়েছে তার শেষ হবে হয়তো বিয়োগান্তক কোন ঘটনার মধ্যদিয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের সুসময় চলছে। আর এই সু সময়ে অতিথি পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। এসকল অতিথি পাখিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। এতে করে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়তে পারে।
সুতরাং রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, উপজেরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুনরায় কোন দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে না এনে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনাই আওয়ামীলীগের কোন্দলের ফাটল দমাতে পারে বলে মন্তব্য তাদের।