আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আইভীর চ্যালেঞ্জ, তৈমূরের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা সাত প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং তৈমূর আলম খন্দকার। এ দুই প্রার্থীকে ঘিরে নানা অংক কষছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেউ বলছেন ব্যক্তি ইমেজ ও প্রতিবাদী কণ্ঠের কারণে এগিয়ে রয়েছেন আইভী, আবার কেউ বলছেন পরিবর্তনের জোয়ারে এগিয়ে থাকবেন তৈমূর। তবে, দুই প্রার্থীর কাছে নির্বাচনি মাঠ ততটা সহজ নয়। এমনটা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাদের চলন ও বলনে।

টানা ১৮ বছর ধরে নগর ভবন শাসন করা ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে নৌকা প্রতীক পেলেও আসন্ন তৃতীয় সিটি নির্বাচনটিকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন। আইভী বলেছেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনকেই তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কারণ, তাকে পরাজিত করতে অনেকগুলো পক্ষ এক হয়েছে। ঘরে-বাইরে সকল পক্ষ মিলেগেছে। কীভাবে বিশৃঙ্খলা করে তাকে পরাজিত করা যায় সেই চিন্তা করা হচ্ছে।’ গতকালের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নৌকার প্রার্থী ডা. আইভী।

অন্যদিকে, গতকাল ২নং রেলগেটে অনুষ্ঠিত নৌকার প্রার্থীর পথসভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেছেন, ‘নির্বাচনে কেউ কেউ অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, কেউ যেন কোন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন সন্ত্রাসীদের উঁকি-ঝুকি আমরা মানবো না।’

একই সভায় আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘আইভী প্রতিবাদী কণ্ঠ হওয়ায় সকল অপশক্তি, নৈরাজ্যবাদী এবং রাজনৈতিক গডফাদাররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তার জয়যাত্রা বন্ধ করতে।’

আইভীও বলছেন, এই নির্বাচনটিকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে ভোটের পাশাপাশি তার লড়তে হবে ছাঁয়া শক্তির বিরুদ্ধে। যদিও চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদও ব্যাক্ত করছেন তিনি।

অন্যদিকে, ২০১১ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে পাঁচ ঘন্টা পূর্বে বসে পরা তৈমূর আলম খন্দকার এবারের নির্বাচনে নানা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তার নানাবিধ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়া এবং সুষ্ঠু ভোট নিয়ে। গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তৈমুর বলেন, ‘সরকারি প্রার্থী প্রতিদিন নির্বাচনী আচরনবিধি লঙ্ঘন করলেও সেটা তারা দেখে না। উল্টো আমার নির্বাচনী এজেন্ট-কর্মীদের উপর প্রতিদিন পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তারা ঢাকা থেকে লোক আনছে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ধমক দেয়ার জন্য। তারা বলেছে ঘুঘু দেখেছ ঘুঘুর ফাঁদ দেখো নি। আমি ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের ঘুঘুর ফাঁদ দেখা শুরু করেছি। আমার নির্বাচনি সমন্বয়কসহ কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। টেলিফোনেও তাদের থ্রেড দেয়া হচ্ছে। এটা নির্বাচনের চরম আচরণবিধি লঙ্ঘন। এর ফলে আমি কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি। অথচ, নারায়ণগঞ্জের জনগন আমাকে তাদের মনের প্রার্থী হিসেবে পেয়েছে। জনগন এ নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও সকল দলের নেতাকর্মীরা আমার প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করছে। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে নির্বাচন করছে। ঢাকা থেকে মেহমান এসে তাদের বক্তব্যে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ব্যাথা দিয়ে তারা ভয়ভীতি দেখায়। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে তারা এসব করছে।’

তৈমুরের বক্তব্যে তার শঙ্কা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। যদিও তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে নিশ্চিত করেছন এবং সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে জনমনে, নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া আইভী নাকি শঙ্কায় থাকা তৈমূর ; কার শিবিরে উড়বে জয়ের কেতন? সেই উত্তর মিলবে ১৬ জানুয়ারি।