নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে বধ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে কুচক্রি মহল! বারবার তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে থেমে নেই তাদের কুটচাল! একের পর এক নানা কুটচালে নারায়ণগঞ্জসহ দেশ বিদেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় এই মেয়রকে রাজনৈতিকভাবে কুপোকাত করতে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এমনটাই মনে করছেন শহরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর থেকেই ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে নিয়ে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি থেকে আইভী মাইনাস করার ষড়যন্ত্র চলে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এরই মধ্যে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েছেন মেয়র আইভী। ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছেন যেখানে তার মৃত্যুও হতে পারতো। তবুও দমে যাননি জনগণের মেয়ল আইভী। এই বছরের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসাকে কেন্দ্র রাজপথে ঘটে যায় এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যা নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে আজীবন থাকবে। ১৬ জানুয়ারীর অই ঘটনায় তাকে মানব ঢাল বানিয়ে না যদি তার অনুসারিরা আনতো তাহলে এতোদিনে আর আইভী থাকতো না। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ষড়যন্ত্রকারী আবারও খেলায় মেতে উঠেছে। সেই পূরণো ময়লা নিয়ে রাজনীতি। এবার ময়লা ফেলতে দেয়া হচ্ছে বাঁধা। সড়ক ও জনপথের খালি জায়গায় ফেলতে বাঁধা, সরকারী খাস জমিতে বাঁধা, এমনকি সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খালি জায়গায়ও বাঁধা। সব জায়গা থেকেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মারপিট করে তাড়িয়ে দিচ্ছে! উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে ময়লার দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত নগরবাসী। এদিকে লাঞ্চনার শিকার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে কয়েকটি ময়লার গাড়ি রেখে চলে এসেছেন! পরিচ্ছন্ন কর্মীদের এ অভিনব প্রতিবাদে শহরজুড়ে এখন আলোচনা। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড়।
অন্যদিকে, গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী মেয়র আইভীর অভিযোগ, প্রতিবছর রোজা এলেই ময়লা ফেলা নিয়ে খেলায় মেতে উঠে একটি প্রভাবশালী মহল। গত ৪ বছর ধরেই এ খেলা চলছে! তারা জালকুড়িতে লিঙ্ক রোডের পাশে ময়লা ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে। কাশীপুরে সরকারি খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলে বাঁধা দিয়েছেন ফতুল্লা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল্লা বাদল। সেখান থেকে ফিরে ইসদাইরে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব জমিতে ময়লা ফেলতে গেলেও গত বুধবার বাঁধা দেয় শামীম ওসমানের সমর্থক কায়সার! এই কায়সার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেছেন।
মেয়র অতিতের উদাহরণ টেনে উল্লেখ করেন, গত ৪ বছর আগে আমার নিউজিল্যান্ডে সফরকালে প্যানেল মেয়র ওবায়দুল্লাহকে ময়লা ফেলা নিয়ে অপদস্ত করা হয়। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশে যেখানে নম পার্ক করা হয়েছে সেখানেও ময়লা ফেলতে দেয়া হয় নি। অথচ জায়গাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের।
মেয়র বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে জালকুড়িতে সড়কের পাশে ময়লা ফেলা যাবেনা বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অথচ আমরা কোথায় ময়লা ফেলব তা তিনি বলেন নি! তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি কাশীপুরের সরকারী জায়গাতে ময়লা ফেলতে। কিন্তু সেখানেও সাইফুল্লাহ বাদল বাঁধা দিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় নি। তারপরই সিদ্ধান্ত হয় ইসদাইরের নিজস্ব জমিতে ময়লা ফেলার। কিন্তু অবাক কা- সেখানেও বাঁধার সৃষ্টি করা হয়েছে! আরো আশ্চর্যের ব্যাপার, প্রশাসনের সামনেই এধরনের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় নি।
মেয়র আইভী প্রশ্ন রাখেন, জেলা প্রশাসন কেন সেখানে তার ইউএনওকে ঘটনাস্থলে পাঠাল না? পুলিশ আমাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া তাঁরা ইসদাইরের ঘটনাস্থলে যাবেন না।
মেয়রের প্রশ্ন, তাহলে ময়লা নিয়ে সিটি কর্পোরেশন যাবে কোথায়? আমরা কেন আমাদের নিজস্ব জায়গাও ময়লা ফেলতে পারবো না? তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন আমাদের সহযোগগিতা করছে না।
কার কথায় চলছে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন? মানুষ ময়লার দুর্গন্ধের মধ্যে কষ্ট ভোগ করবে-আর প্রশাসন চেয়ে চেয়ে দেখবে! তা মেনে নেয়া যায় না।
মেয়র সাফ জানিয়ে দেন, প্রশাসন যদি ময়লা ফলতে সহযোগিতার হাত না বাড়ায় তাহলে সিটি কর্পোরেশন শহরের ময়লা ফেলা বন্ধ করে দেবে।
তবে ময়লা ফেলার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন মান অভিমানের পালা শেষে নগরের ময়লা তার পূরনো জায়গায় ফিরেছে। আপাতত স্বস্তির ঢেঁকুর তুলেছে ময়লা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এক পক্ষ। তবে এই ময়লা বেশি দিন এই যায়গা থাকবেনা বলেও জানালেন সিটি কর্মকর্তারা। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হিরন জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা স্বাপেক্ষেই আগের জায়গাতে ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
চার দিনের নানা নাটকীয়তা ও ময়লা নিয়ে পূরনো রাজনীতির খেলা চলার পর পূনরায় আগের জায়গাতেই ময়লা ফেলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। পূর্বের প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী শুক্রবার (১ জুন) সকাল থেকে জালকুড়ির ডাম্পিং স্পটেই শহরের ময়লা ফেলছে সিটি কর্পোরেশন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আর যাই হোক ময়লা নিয়ে যে রাজনীতি করছে কুচক্রি মহল তাদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যাবে। কেননা মেয়র আইভী জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আর জনগণও মেয়র আইভীকে সর্মথন যোগাচ্ছে। জনগণের বিরুদ্ধে কেউ কোন দিন জয়ী হতে পারেনি।