আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজধানীতে আ.লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ,জনমনে আতঙ্ক

আ.লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

আ.লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

রাজধানী ঢাকায় আগামী শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর)  আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একইদিনে দুই পক্ষের সমাবেশের ঘোষণাকে ঘিরে জনমনেও কিছুটা আতঙ্ক ও ভয় কাজ করছে। ওইদিন ঢাকা দখলে রাখার পাশাপাশি কেউ ষড়যন্ত্র করলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট।

অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, শনিবারের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে। তখন বোঝা যাবে মাঠ কার দখলে।
তবে একইদিন দুই পক্ষের সমাবেশের ঘোষণায় উত্তাপ ছড়ালেও এতে কোনও সমস্যা দেখছেন না দুই পক্ষের নেতারা। তারা বলছেন, এর আগেও একইদিনে দুই দলের সমাবেশ হয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু ভয় বা আতঙ্ক যে থাকে তা অবশ্য স্বীকার করেছেন উভয় দলের নেতারা।

এদিকে দুই দলের সমাবেশের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান।

মঙ্গলবার রাতে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন তো অফিস বন্ধ, এ বিষয়ে আগামীকাল বলতে পারবো। কারণ যারা সমাবেশের অনুমতি দেন, তাদের কাউকে এখন অফিসে পাওয়া যাবে না। তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারবো না।’

ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন,‘সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে এখনও যাচাই-বাছাই চলছে।’

১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, জোটের পক্ষ থেকে আরও একমাস আগে ২৯ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সমাবেশের দিন ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করারও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ১৪ দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে আরও কয়েকটি বৈঠক হবে বলে জানান তারা।

জোটের নেতারা আরও বলেন, ২৯ তারিখে ১৪ দলীয় জোট সমাবেশ করার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন কোনও দল যদি একইদিন সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় এতে আমাদের কিছু করার নেই। তবে কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে তা প্রতিহত করা হবে।
এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতি সভায় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন,‘আগে থেকেই ঢাকা আমাদের দখলে ছিল, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও ঢাকা আমাদের দখলেই থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।’

এ সময় তিনি আরও বলেন,‘চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখবো, কারা মাঠে নামবে আর কে নামবে না।’ জোটের নেতাকর্মীদের যেকোনও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন, যেন ওই অপশক্তি (বিএনপি) মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন।’

১৪ দলীয় জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন  বলেন, ‘আমাদের সমাবেশের তারিখ এক মাস আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। আর সোমবার বিএনপি ২৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এখন আবার তারা কেন তারিখ পরিবর্তন করে একইদিন সমাবেশ করতে চায়, তা তারা ভালো বলতে পারবেন। এতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই এবং কোনও উদ্বেগের কারণ দেখি না। তাছাড়া সমাবেশ তো একই জায়গায় হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটকে কাউন্টার দেওয়ার মতো অবস্থা বা ক্ষমতা বিএনপির নেই। তবে কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে, আর তার প্রমাণ পেলে অবশ্যই তা প্রতিহত করা হবে।’

এদিকে বিএনপির জনসভার তারিখ পরিবর্তন করা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে জনসভা করার ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার রিজভী বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর নয়, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর জনসভা করবে বিএনপি। তবে কেন জনসভার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।

তবে বিএনপির একটি সূত্র  জানান,‘সমাবেশে দলের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি ও ১২ দফা লক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে। কিন্তু সেই দফাগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এ জন্যই সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।’
দলটির নেতাদের দাবি,‘বিএনপি কোনও ষড়যন্ত্র করে সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করেনি।’

সমাবেশের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান  বলেন,‘এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই। কারণ ১৪ দলীয় জোট একটি হলরুমে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আর বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে। সুতরাং এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে কি দেশে একইদিনে দুই দলের জনসভা হয়নি? অনেকবার হয়েছে। তখন কোনও সমস্যা হয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। তাহলে এখন কী সমস্যা?’

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,‘সরকারি দল বা জোট হিসেবে তারা একদিন পরেও সমাবেশ করতে পারে। কারণ একইদিন সরকারি জোট এবং বিরোধী দল সমাবেশ করলে সাধারণ জনগণের মধ্যে একটু শঙ্কা বা ভয় থাকে। তারপর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বে যারা আছেন তারা যদি মনে করেন এটা কাভার করতে পারবেন এতে কোনও সমস্যা নেই।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বরের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এইকসঙ্গে ঢাকা বিভাগের সব জেলার নেতাদেরও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন,‘বিএনপির এই সমাবেশ হবে সরকারের দুর্নীতি ও প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে। কাজেই সময় যতই কম হোক না কেন এটাকে আমরা জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করবো। সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।’

তিনি আরও বলেন,‘দখল করার রাজনীতি বিএনপি করে না। ব্যাংক দখল, মানুষের সম্পত্তি দখল, মাঠ দখল করার মতো বিষয়গুলো কখনও গণতান্ত্রিক রাজনীতি হতে পারে না। আওয়ামী লীগ যতই চেষ্টা করুক না কেন, বিএনপি তাতে ভয় পায় না। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছে। এই কারণে তারা কাউকে মাঠে নামতে দিতে চায় না।’