বিশেষ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ নগরীর আলামিন নগর এলাকার ভ্যান চালক শফি আলম। গত ২ মাস আগে তার ৫ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যায় ভাড়াটিয়া প্রতিবেশী। এ ঘটনায় মামলা হয় সদর থানায়। তদন্তে বেড়িয়ে আসে শিশুটিকে অপহরণ করেছে পেশাদার শিশু অপহরনকারীরা। বিক্রি করে দিয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়।
ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে এক নারী শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলায় বলা হয়, চলতি বছরের ২৯ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ি থেকে থেকে বের হন ভ্যান চালক শফি আলম। ১০ টার দিকে তার স্ত্রী রাশিদা বেগম তাদের ৫ মাসের শিশু মোঃ রাকিব কে কোলে নিয়ে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। এমন সময় ওই বাড়ির আরেক ভাড়াটিয়া মোসাঃ হাসি বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে তাকে বলেন “ভাবি আপনার ছেলেটাকে আমার কাছে রেখে যান।” প্রতিবেশী হিসেবে তাকে বিশ্বাস করে শিশু রাকিবকে তার কাছে রেখে বাজারে যান ভ্যান চালকের স্ত্রী। আধঘন্টা পর বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন ওই প্রতিবেশী ও তার ছেলে বাড়িতে নেই। তাদের খোঁজাখুজি করে না পেয়ে তিনি তার স্বামীকে খবর দেন। শফি সেখানে গিয়ে আশাপাশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজেও তাদের সন্ধ্যান করতে পারেনি। পরে বাড়ির মালিকের কাছে জানতে পারেন মাত্র ২১ দিন আগে সেখানে ঘরভাড়া নিয়েছিলেন ওই নারীসহ এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির বাবা ভ্যান চালক শফি আলম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকারী কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে ১৯ মে বিকেলে সাড়ে ৫ টার দিকে সোনারগাঁয়ের ঝাউচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোসাঃ হাসি (২৫) কে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ হাসি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। সে জানায়, ঘটনার দিন তাদের চক্রের আরেক সদস্য সেলিম (৪৫) ও সুমি (৩৭) শিশু রাকিবকে চুরি করে। পরে কামাল হোসেন (৩২) ও মোঃ মঙ্গল হোসেন (৪২) সহযোগীতায় মোসাঃ বিলকিছু আক্তার (৩৮) নামের এক নারীর কাছে পয়ত্রিশ হাজার টাকার বিক্রি করে দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, পরবর্তীতে আসামী মোসাঃ হাসি (২৫) কে নিয়ে অভিযান চালিয়ে সোনারগাঁয়ের বিরেশের গাও এলাকা মোঃ কামাল হোসেন মোঃ মঙ্গল হোসেন (৪২) কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে কুমিল্লা মেঘনার সাত আনী পূর্ব পাড়া এলাকা মোসাঃ বিলকিছ আক্তার আটক সহ শিশু রাকিব কে উদ্ধার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ জামান জানান, প্রাথমিক তদন্ত জানা গেছে, তারা পেশাদার শিশু অপহরন দলের সক্রিয় সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সহযোগীতায় ছদ্ধ বেশ ধারন করে জেলার বিভিন্ন এলাকার ঘরভাড়া নিয়ে নবজাতক শিশু অপহরন করে আসছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় মামলার আসামী হিসেবে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আদালত পুলিশের পরির্দশক আসাদুজ্জামান জানান, মামলার তিন আসামীর মধ্যে মোঃ হাসি আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তা রেকর্ড করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শিশু রাকিবকে তার মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
