আজ বুধবার, ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাতিল হচ্ছে ওয়ার্ড কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার পারদ বেশ তুঙ্গে উঠেছিল। ওয়ার্ড কমিটিকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। একটি পক্ষ শুরুতেই অভিযোগ তুলেছিলেন; ১৭টির মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই অযোগ্যদের পদায়ন করে কার্যত মহানগর আওয়ামী লীগকে দূর্বল করা হয়েছে। সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাতের এমন অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হয়েছেন সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা প্রতিরোধে এসকল ওয়ার্ড কমিটির নেতারা ব্যর্থ হওয়ায় আইভী এবং আরাফাতের সেই অভিযোগেরই যেন সত্যতা মিলেছে- এমনটা বলছেন তৃণমূল কর্মীরা।
জানা গেছে, মেয়র আইভী এবং জিএম আরাফাতকে নিয়ে হুঁশিয়ারী উচ্চারণের পাশাপাশি তাদের ঘোষিত প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটিই শক্তিশালী ও সময় উপযোগি হয়েছে বলে দাবি করে আসছিলেন আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা সহ তাদের অনুসারীরা।
এবার আরাফাত অনুসারীরা বলছেন, ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে বিতর্কের রেশ না কাটতেই ফুটে উঠেছে আসল চিত্র। কোটা ইস্যুতে সৃষ্ট আন্দোলন ও সহিংসতা প্রতিরোধে মহানগরের বর্তমান ১৭টি ওয়ার্ড কমিটির নেতারা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি। উপরন্ত ১৬নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টিও রক্ষা করতে পারেনি ওই ওয়ার্ডের বর্তমান নতুন কমিটির নেতারা।
তথ্য বলছে, এই ওয়ার্ডের নেতৃত্ব নিয়ে বেশি ফুঁসে উঠেছিলেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং জিএম আরাফাত। তাদের অভিযোগ ছিলো, ১৬নং ওয়ার্ডটি মেয়র আইভী এবং জিএম আরাফাতের বসবাসের এলাকা হলেও তাদের কারো সাথে সমন্বয় না করে যোগ্য এবং সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে ওয়ার্ডটির নেতৃত্ব অযোগ্য ও দূর্বলদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। দাফন করা হয়েছে আওয়ামী লীগকে। তবে কী মেয়র আইভী এবং জিএম আরাফাতের অভিযোগই শেষ পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হলো- এমন আলোচনাই চলছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে।
জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে তা অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলোতেও আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের ঢেউ শুরু হয় নারায়ণগঞ্জেও। গত ১৭ই জুলাই বিকেল পর্যন্ত আন্দোলন ছিলো শিক্ষার্থীদের হাতে। বিকেলের পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আর রাজপথে দেখা যায়নি। তবে ১৭ জুলাই রাত থেকে আন্দোলনে নেমে পড়েন বিএনপি ও জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীরা- এমন অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আয়ামী লীগের। পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে আন্দোলনের ভয়াবহতা। রূপ নেয় সহিংসতা এবং নৈরাজ্যে।
তাণ্ডবকারিরা নারায়ণগঞ্জের ২নং রেলগেইট এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এবং ১৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত স্থানীয় কার্যালয় দুটিতে ব্যাপক হামলা চালায়। শহরে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যূরাল ভেঙ্গে ফেলে। সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের ফাঁড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ চালায়। বেসরকারী এবং ব্যক্তিমালিকানা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হামলা চালানো হয়। গত ১৮ জুলাই থেকে ২০জুলাই পর্যন্ত এসব তান্ডব চললেও তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাদের। ফলে অনেকেই বলছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দায়িত্বশীল নেতারা সক্রিয় এবং সাহসী ভূমিকা রাখলে দুষ্কৃতিকারীরা এভাবে তাণ্ডব চালাতে পারতো না। পদপদবী বহন করা ওয়ার্ড নেতাদের কাছ থেকে কোনো রকম প্রতিরোধ না আসায় দূর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও।
এদিকে, ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় এবার এসকল ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বন্দোবস্ত চলছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত করার মত সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে বলেও কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যেই সহিংসতা হয়েছে, তা প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অনেক নেতাকর্মী মাঠে নেমেছিলেন, আবার অনেকে নামেন নাই। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিস পরিদর্শনে আসলেও আমি উপস্থিত হতে না পারলেও ঢাকা যাওয়ার পথে মোবাইলে তিনি আমাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমাদের নেতা শামীম ওসমানও নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে বলেছেন। আমরা যে ১৭টি ওয়ার্ড কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলাম, সেই গুলোর মধ্যে অনেকেই প্রতিরোধ করেন নাই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো। এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। শীঘ্রই ওইসব কমিটি বাতিল করা হবে। এছাড়া সিনিয়র যেসকল নেতারা এই সহিংসতার প্রতিরোধ না করে ঘরে বসেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্ততি চলছে। ইতিমধ্যে সকলকে মেসেজের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’