আজ সোমবার, ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুকুলের দম্ভ চূর্ণ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

জীবনে উন্নতির অন্যতম হাতিয়ার ইতিবাচক চিন্তা ও আত্মবিশ্বাস। এই বলে বলীয়ান লোকজন যেকোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য পান। তবে অতি আত্মবিশ্বাস ভালোর বদলে বিপদ ডেকে আনে। বন্দর উপজেলা নির্বাচনে অতিরিক্ত আত্মবিশ^াসই আতাউর রহমান মুকুলকে ডুবিয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
তারা বলছেন, বন্দর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই নিজেওে জনপ্রিয়তা ও জয়ের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ^াসী ছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন ভোটের অঙ্কে তার ধারে কাছেও কেউ আসতে পারবেন না। এ নিয়ে তার দাম্ভিকতাও ছিল অনেক বেশি। এতটাই দাম্ভিকতা ছিল তার যেন পা মাটিতেই পড়ছিল না। কিন্তু ভোটের ফলাফলে তার সেই দম্ভ চূর্ণ হয়েছে।
সূত্র বলছে, সদস্য শেষ হওয়া বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আতাউর রহমান মুকুল তৃতীয় হয়েছেন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মাকসুদ হোসেন। দ্বিতীয় হয়েছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশীদ। তাদের প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমেÑ ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট (মাকসুদ হোসেন), ১৪ হাজার ৮৩৮ ভোট (এম এ রশীদ) এবং ১২ হাজার ৬২২ ভোট (আতাউর রহমান মুকুল)।
এদিকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরপর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। সেসময় অবশ্য বিএনপি ভোট বর্জন করেনি। এছাড়া তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবেই ওই দুটি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
স্থানীয়রা বলছেন, তৃতীয় ও চতুর্থ উপজেলা পরিষ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করেনি। আবার ওই দুটি নির্বাচনে তিনি বিএনপি নেতা হিসেবেই স্থানীয় নেতাকর্মীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপট ছিল একদমই উল্টো। এবার তিনি বিএনপি থেকে যেমন বহিষ্কার হয়েছেন তেমনি এবারের নির্বাচন বিএনপি বয়কটও করেছে। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দলটি বন্দরজুড়ে লিফলেটও বিতরণ করেছিলো। ফলে বিএনপির বড় একটি অংশই এই নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। তার ভরাডুবির এটি অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টজনরা।
এছাড়াও এবারের নির্বাচনে নিজের জয় নিয়ে অতিমাত্রায় আশাবাদী ছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তার আত্মবিশ^াস ছিল আকাশচুম্বি। ফলে ভোটের মাঠে যেসব কৌশল তার অবলম্বন করার দরকার ছিল তা তিনি একদমই করেননি। তিনি ভেবেছিলেন, বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকলেও তিনি জয়ী হবেন। কিন্তু ভোটের ফলাফলে তার সেই অতিমাত্রার আত্মবিশ^াস যে ভুল ছিল সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে এবারের নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে আতাউর রহমান মুকুলের প্রাপ্তি থেকে হারানোর পাল্লাটাই সব থেকে বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই নির্বাচনে হারের সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে গড়ে উঠা আতাউর রহমান মুকুল একদমই ব্যাকফুটে চলে গেছেন। রাজনীতিতে তার কামব্যাক করাটা খুব একটা সহজ হবে না। অথচ নির্বাচনের আগে তিনিই ভেবেছিলেন, সহজ জয় পাবেন এবং নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে কালাম পরিবারকে টপকে গিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। কিন্তু হারের কারণে এবার তার দলে ফেরাও কষ্টসাধ্য বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকের কাছে আতাউর রহমান মুকুল এখন বিএনপির রাজনীতির জন্য ডেডহর্স।