আজ সোমবার, ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টিসিবি পণ্য বিতরণে দুর্নীতি, নাসিক কাউন্সিলর বরখাস্ত

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। টিসিবি পণ্য বিতরণে দুর্নীতি এবং তাতে বাধা দিলে এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে শারীরিকভাবে আঘাত করার অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘টিসিবি পণ্য বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে। এতে প্রতিবাদ জানালে ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সানিয়া আক্তারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের পর মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি এবং বরখাস্তের বিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলরকেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ওই ওয়ার্ডে আরেকজন কাউন্সিলরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান জাকির।
এর আগে, গত ৭ মে বরখাস্তের বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ আরেক চিঠিতে অভিযুক্ত কাউন্সিলর সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৩(৩) ধারা অনুযায়ী তাকে কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায় ২৬ নং ওয়ার্ডের অনুকূলে আসা টিসিবির পণ্য বিতরণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদ করায় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরক সানিয়া আক্তারকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন সামসুজ্জোহা ও তার লোকজন। এই ঘটনায় সানিয়া বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেন। অভিযোগে কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা (৫০) ছাড়াও তার ভাই মো. জাহাঙ্গীর (৩৭) ও মো. রিপন ওরফে অটো রিপনকে (৪০) অভিযুক্ত করা হয়। যদিও পরদিন একই থানায় পাল্টা অভিযোগ করেন কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা।
সানিয়া আক্তারের অভিযোগে ছিল, কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা গত বছরের ৯ জানুয়ারি ২ হাজার পরিবারের জন্য আসা টিসিবির পণ্য বিতরণ না করে বিক্রি করে দেন। এই কারণে বুধবার বিকেলে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯শ’ পরিবারের জন্য আসা টিসিবির পণ্য বিতরণের আগে গুনে দেখতে চান সানিয়া। এতে বাধা দেন সামসুজ্জোহা। পরে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে চর-থাপ্পর মারেন বলে লিখিত অভিযোগে সানিয়া আক্তার উল্লেখ করেছেন।
এই সময় কাউন্সিলর সানিয়া আক্তারের ব্যক্তিগত সচিব মো. নাঈমকেও মারধর করা হয় বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় সানিয়া আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাও নেন।
জানতে চাইলে ওই সময় কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহা বলেন, ‘কাউন্সিলর সানিয়া আক্তারকে বিকেল চারটায় কল করেছি কিন্তু তিনি এসেছেন সন্ধ্যা ছয়টায়। ততক্ষণে অনেক মানুষকে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়ে গেছে। তখন টিসিবির পণ্য গুনতে চাইলে তাকে বলি, বিতরণ থামিয়ে গুনতে গেলে লোকজন অযথা হয়রানি হবে। পরে প্যাকেট গুনলেই তো হবে। কিন্তু সে না শুনে আমার সাথে উচ্চবাচ্য করতে থাকে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে তর্ক হয়। তখন কাউন্সিলর সানিয়ার সচিব আমার দিকে তেড়ে আসে। তাকে চর মারতে গিয়ে কাউন্সিলরের গায়ে গিয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঘটে গেছে।’
এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। তদন্তে সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে টিসিবি পণ্য বিতরণে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম এবং নারী কাউন্সিলরকে শারীরিকভাবে আঘাত করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।