স্টাফ রিপোর্টার :
‘আপনি যত বড়ই নেতা হোন না কেন কর্মীদের মূল্যায়ন না করলে আপনাকে এর খেসারত দিতে হবেই’ বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী ফলাফল যেন সকল নেতাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এমন বার্তা দেখিয়ে দিয়ে গেলো। নির্বাচনের দুদিন পরও বন্দরের সর্বত্র আড্ডায় এখন এমন কথাই উঠে আসতে শুরু করেছে।
সেই সাথে আরো আলোচনা হতে শুরু করেছে ভুল মানুষকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী করা হয়েছিলো। নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে এম.এ রশিদ যে যোগ্য প্রার্থী নয় এটা আগে থেকেই সকলে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত ২০১৯ সালে এম.এ রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের আর্শীবাদেই বিনা প্রতিদ্ব›দ্ধীতায় তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পেরেছিলেন এটা সবারই জানা। কিন্তু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত ৫ বছরে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কোন যোগাযোগ রক্ষা করেননি। এছাড়াও উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথেও আভ্যন্তরিন কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথেও তেমন যোগযোগ রক্ষা করে চলেনি।
ফলে সবার মাঝে তাকে নিয়ে একটি চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়ে ছিলো। বেশ কয়েকবার সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটিয়ে ছিলেন অনেকেই। এছাড়াও তার ছোট আনোয়ার হোসেন আনু এবং তার ভাতিজা নয়নের কর্মকান্ডে নিজ দলের লোকেরাও নিপীরিত হয়ে পড়েছিল। সব কিছু মিলিয়ে এম.এ রশিদের উপর ক্ষুদ্ধ ছিল আওয়ামী লীগের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
যার প্রতিফলন এবারের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এমপি সেলিম ওসমান, এমপি শামীম ওসমানের নির্দেশে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ থেকে বন্দরে গিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেরিয়েছেন। তাদের সাথে তৃনমূলে নেতাকর্মীরাও জোয়ার তুলে ছিলেন এম.এ রশিদের দোয়াত কলমের প্রতীকের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের দিন পুরো পরিস্থিতি উল্টে গিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের বাকি দুইজন প্রার্থীকে ভোট দিলেও চেয়ারম্যান পদে এম.এ রশিদের বেলায় যেন বিমুখ হয়ে তার প্রতিপক্ষকেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন।
নির্বাচনী ফলাফলের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছালিমা ইসলাম শান্তা ফুটবল প্রতীকে ২৯ হাজার ৪৫৬ ভোট বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসেন মাইক ও শহিদুল ইসলাম জুয়েল টিউবওয়েল প্রতীকে দুজনে ভোট পেয়েছেন ৩১ হাজার ২৪ভোট। এর মধ্যে একজন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানুকে পরাজিত করে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ পেয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৮৩৮ ভোট। অপরদিকে মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন ভীষন চাপে। নির্বাচনে মাঠে নামার পরই নির্বাচন থেকে সরে যেতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রকাশ্যে হুমকি। নির্বাচন চলাকালীন সময় দ্বিতীয় স্ত্রী নির্যাতন মামলা, নির্বাচন কমিশন থেকে দুই দফায় শোকজ, নিজ দল জাতীয় পার্টি থেকে বহিস্কার সহ নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে হেটে নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন মাকসুদ হোসেন। অপরদিকে সব রকম সুবিধা পেয়েও নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে এম.এ রশিদের। এ যেন সেই বার্তাই দিচ্ছে আপনি যত বড় নেতাই হোন না কেন কর্মীদের মূল্যায়ন না করলে তার খেসারত আপনাকে দিতেই হবে।